এত বড় গরু জেলায় আর একটিও নেই

এত বড় গরু জেলায় আর একটিও নেই

বিশালাকৃতির দেহ, চলন-বলন এবং আয়েশি খাবার খাওয়ার জন্য মালিক তার নাম রেখেছেন ‘চাঁপাই সম্রাট’। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির উচ্চতার সম্রাট দেখতেও বেশ মোটাতাজা ও আকর্ষণীয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে এর ছবি। জেলার সবচেয়ে সুদর্শন ও বড় গরু হিসেবে সম্রাটকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। দূরদূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতারাও। ৩২ মণ ওজনের সম্রাটের মালিক দাম হাঁকছেন ৩০ লাখ টাকা।

অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের সম্রাটের মালিক শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য জুলফিকার আলী। উচ্চশিক্ষিত ও একাধিকবার নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি একজন সফল উদ্যোক্তা। ১৫ বছর আগে তিনি শুরু করেন খামার ও গরু লালনপালন। বর্তমানে জেলার সবচেয়ে বড় গরু তার খামারে।

`যদি ঈদের আগে সব পশুর হাট খুলে দেওয়া হয়, তাহলে ঢাকার কোনো এক হাটে সম্রাটকে বিক্রি করব। অনলাইনেও বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু বিশালাকৃতির ও দাম বেশি হওয়ায় অনলাইনে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। হাটে গিয়ে বিক্রি করতে না পারলে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে’

জুলফিকার আলী দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, ১৫ বছর ধরে গরুর খামার করি। বর্তমানে আমার খামারে চাঁপাই সম্রাট ছাড়াও আরও চারটি গরু আছে। সব গরুই বিক্রিযোগ্য। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হচ্ছে সম্রাট। আমার খামারে অস্ট্রেলিয়ান জাতের একটি গাভি ছিল। তার গর্ভেই জন্ম হয় সম্রাটের। ছোট থেকেই বেশ ভালো খাবার আর প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হওয়ায় সে খুবই শান্ত স্বভাবের। এত বড় গরু জেলায় আর একটিও নেই।

গরুটিকে মোটাতাজা করতে বিশেষ কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেননি, এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে খড়, ভুসি, গম, খৈল, কলা ও ঘাস খেয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিন লালি ও খৈল দিয়ে ছানা তৈরি করে খেতে দেওয়া হয় গরুটিকে। গত জুনের শেষের দিক থেকে পাইকাররা আসছেন সম্রাটের খোঁজে। তারাও এটিকে দেখে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তাকে বিক্রি করছি না।

তিনি বলেন, গত বছর বিক্রির চেষ্টা করেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় বিক্রি করিনি। এ বছর চলমান লকডাউনেও একটু চিন্তায় আছি। যদি ঈদের আগে সব পশুর হাট খুলে দেওয়া হয়, তাহলে ঢাকার কোনো এক হাটে সম্রাটকে বিক্রি করব। অনলাইনেও বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু বিশালাকৃতির ও দাম বেশি হওয়ায় অনলাইনে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। হাটে গিয়ে বিক্রি করতে না পারলে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে বলেও জানান তিনি।

সম্রাটকে দেখতে আসা যুবক ইউসুফ আলী বলেন, এত বড় গরু জীবনেও চোখে দেখিনি। উচ্চতায় আমার থেকেও বেশি। কিন্তু বড় আকারের তুলনায় গরুটি অনেক শান্ত স্বভাবের। এত দামি গরু কিনতে পারব না, বরং দেখার উদ্দেশ্যেই বন্ধুবান্ধবরা এসেছি।

শিবগঞ্জের এক গরু ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, আমরা সাধারণত বিভিন্ন হাট, খামার ও বাড়িতে গিয়ে গরু কিনে তা হাটে বিক্রি করি আমরা। বিভিন্ন মারফতে খবর পেয়ে চাঁপাই সম্রাটকে দেখতে আসছি। তবে আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। কারণ, এই সময়ে এত বিশাল গরু কেনা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। লকডাউনে বাজার বসছে না, তাই বিক্রি করতে না পারলে সব শেষ হয়ে যাবে।

পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, এত দামি গরু জেলায় বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এটি রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামের হাটে নিয়ে যেতে পারলে বিক্রি করা যেত।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রণজিৎ চন্দ্র সিংহ দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, আমি জুলফিকার আলীর বাসায় গিয়ে গরুটি মেপে দেখেছি। হিসাব-নিকাশ করে দেখা দেখা গেছে, আনুমানিক ওজন ১ হাজার ২৫৯ কেজি বা ৩২ মণের কাছাকাছি। শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতিবছর ঈদ সামনে রেখে অনেক খামারি গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। তবে এমন বিশালাকৃতির গরু আর দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বিভিন্ন খামারে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৬টি। জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৮টি।

আপনি আরও পড়তে পারেন