আফগানের ৬ষ্ঠ প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবান পতাকা

আফগানের ৬ষ্ঠ প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবান পতাকা

আফগানিস্তানের ষষ্ঠ প্রাদেশিক শহর দখলে নিতে সমর্থ হয়েছে তালেবান। আফগান বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সামাঙ্গান প্রদেশের রাজধানী আইবাক দখলে নেয় তারা। গতকাল সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখল নিচ্ছে তালেবান। আইবাক দখলের মধ্য দিয়ে চার দিনে ৬টি প্রাদেশিক রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নিলো তারা। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তালেবান এক বিবৃতিতে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশটির শহর নিজেদের অধীনে নেওয়ার কথা জানায়। বিষয়টি ফরাসি নিউজ এজেন্সিকে নিশ্চিত করেছে সামাঙ্গান প্রদেশের উপ-গভর্নর।

 

 

তিনি বলেন, তালেবান শহরটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সেখান থেকে আফগান সরকারের কার্যক্রম ও পুলিশ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরটি দখল নিতে গিয়ে কতজন হতাহত হয়েছে তা জানায়নি কোন পক্ষ।
এদিকে লশকরগাহ, হেরাত ও কান্দাহার নিয়ন্ত্রণে নিতে আফগান বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে তালেবানের। আফগানিস্তানে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে তালেবান। ক্ষমতার লড়াইয়ে নিজেদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে দলটি। রোববার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তারা কুন্দুজ, সার-ই-পুল ও তালোকান দখল করে নেয়। আইনপ্রণেতা, নিরাপত্তা বাহিনী ও ওইসব নগরীর অধিবাসীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তালেবান রোববার বিকেলে এক বিবৃতিতে জানায়, আল্লাহর রহমতে কিছু প্রচন্ড লড়াইয়ের পর মুজাহিদরা কুন্দুজ দখল করে নিয়েছে। এরপর তাদের আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, মুজাহিদিনরা সর-ই-পুলও দখল করে নিয়েছে। সেখানকার সব ভবন তাদের নিয়ন্ত্রণে। এরপর সন্ধ্যায় তালেবান টুইটারে জানায়, তারা তাখার প্রদেশের রাজধানী তালোকানও জয় করেছে।
সার-ই-পুলের নারী অধিকারকর্মী পারবিনা আজিমি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও অবশিষ্ট বাহিনী নগরী থেকে তিন কিলোমিটার দূরের সেনা ব্যারাকে হটে গেছে। প্রাদেশিক পরিষদের এক সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন মুজাহিদজাদা বলেন, তালেবান ওই কম্পাউন্ডটি ঘিরে রেখেছে।
এ পাঁচ নগরীর মধ্যে কুন্দুজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকার ওপর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো। সূত্র অনুযায়ী, কুন্দুজ শহরের প্রধান চত্বরে একটি পুলিশ বুথের উপর মিলিশিয়ামিনদের পতাকা উড়তে দেখা যায়। এটি চতুর্থ প্রাদেশিক রাজধানী ছিল যা এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তালিবান যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জানা যায়, আফগান অঞ্চল জুড়ে ক্রমশই চাপ বাড়িয়েছিল তালিবানরা এমনকি রাজধানী কাবুলে পর্যন্ত একটি অভিযান চালায়।
দুই প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা জানান, তালিবানরা গভর্নরের কার্যালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্বে নেয় এবং পাশাপাশি প্রধান কারাগার ভবন তথা সেখানে গ্রেফতার হওয়া তালিবানসহ আরো পাঁচশো বন্দিকে মুক্তি দেয়। কুন্দুজের দখল নিঃসন্দেহে তালিবানদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য লাভ। সেখানে আঞ্চলিক দখল এবং ক্ষমতা ধরে রাখার বিষয়টি পাশ্চাত্য সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারাভিযান।
কাউন্সিলম্যান গোলাম রব্বানি জানান, শহরের বিমানবন্দর এবং শহরের অন্যান্য অংশে এখনও যুদ্ধ চলছে। কুন্দুজ একটি কৌশলগত চৌরাস্তা যেখান থেকে শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া যেমন সহজ তেমনই কাবুল সেখান থেকে ২০০ মাইল মাত্র। কুন্দুজের আরেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ ইউসুফ আইয়ুবীও বলেছেন, আফগান বাহিনী শুধুমাত্র বিমানবন্দর এবং প্রধান সেনা ব্যারাক নিয়ন্ত্রণ করে এবং শহরের বাকি অংশ তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে। আইয়ুবী দেশের চরম অবস্থায় কটাক্ষ করে বলেন, নিরীহ ও দরিদ্রদের কেবল যুদ্ধের মূল্য দিতে হয়। বাকি আফগান বাহিনী এবং তালিবান উভয়ই সাধারণ মানুষের শত্রু। একজন নিরাপত্তা দিতে পারে না এবং অন্যজন মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে না।
রাজধানী কাবুলের সরকার কর্তৃপক্ষ সূত্রে যদিও তালিবানদের উত্তরাঞ্চল অধিকারের ঘটনাটিকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে, আফগান বাহিনী নিজেদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই কিছু এলাকা তালিবানদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা দেশের বাকি প্রান্তেও বিজয় লাভ করবে। কুন্দুজ দখলের উদ্দেশ্য তালিবানদের সবসময়ই ছিল। এটি একটি কৃষিভিত্তিক এলাকা এবং উর্বর জমির প্রদেশ। ন্যাটো সমর্থিত আফগান আক্রমণ তালিবানদের দেশের কেন্দ্রীয় পরিসর থেকে সরে যেতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল।
তখর প্রদেশ থেকে আফগান পার্লামেন্টের সদস্য সৈয়দ শরাফুদ্দিন আইনি বলেন, তালিবানরা তিন মাসের অগ্রগতির পর বিকেলে শহরটি দখল করতে সক্ষম হয় এবং প্রদেশের সমস্ত গ্রামাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এলাকার আরেক সাংসদ নাজিফা ইউসুফি বেগ বলেন, গভর্নর, পুলিশ প্রধান, কাউন্সিল সদস্যসহ সকল প্রাদেশিক কর্মকর্তারা পলাতক। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে তাদের এবং অবশ্যই শহরে সামরিক শক্তির প্রয়োজন।
দেশজুড়ে বিমান হামলা, বোমাবর্ষণ এবং আফগান বাহিনীর অভিযান সঙ্গে তালিবান অগ্রাভিযান দেশের ভৌগলিক চিত্রে যেমন বদল ঘটিয়েছে তেমনই আন্তর্জাতিক স্তরে পরিস্থিতি খুবই জটিল। তালিবানরা রোববার একটি ইংরেজি ভাষায় বিবৃতি জারি করে বলেন যে, সাধারণ বাসিন্দা, সরকারি কর্মচারী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তাদের থেকে ভয়ের কিছু নেই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদেরসহ কোনো প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য সরকারী কর্মচারী, ইসলামিক আমিরাতের মুজাহিদিনদের ভয় পাবেন না বা অন্যত্র পালিয়ে যাবেন না। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বিবিসি ও হিন্দুস্তান টাইমস।

আপনি আরও পড়তে পারেন