আফগান দখলে মরিয়া তালেবান, উত্তরাঞ্চলে তুমুল লড়াই

আফগান দখলে মরিয়া তালেবান, উত্তরাঞ্চলে তুমুল লড়াই

তালেবানের যোদ্ধারা আফগানিস্তানের দখলকৃত ভূখণ্ডে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে শুরু করেছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহর দখলের লড়াই ব্যাপক আকার ধারণ করায় ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরিফের দিকে অগ্রসর হতে থাকা তালেবানের যোদ্ধাদের ঠেকাতে দেশটির সরকারপন্থী একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

মার্কিন-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দেশটি ছাড়তে শুরু করায় শাসনক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালেবান। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আঞ্চলিক শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোকে সরকারের প্রতি সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে তা মুছে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সহযোগীরা বলেছেন, নিজের সরকারকে বাঁচাতে বছরের পর বছর ধরে তিনি যে মিলিশিয়াদের দমন করে এসেছেন এখন সেই আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের কাছে সহায়তা চাইছেন গনি। দেশটিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া টিকিয়ে রাখতে বেসামরিক নাগরিকদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।

দেশটির সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাক শহর থেকে মাজার-ই-শরিফ এবং কাবুলের সংযোগকারী প্রধান সড়কে তালেবানের যোদ্ধারা তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরাল করেছে। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, তালেবানের যোদ্ধারা বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন ভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।

তারা বলেছেন, শহরের বেশিরভাগ এলাকা থেকে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতে দেখা গেছে। আইবাকের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রদেশের কর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্বাস বলেন, সেখানে বর্তমানে স্বেচ্ছা-গৃহবন্দি অথবা কাবুলে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করাই একমাত্র উপায়।

চার সন্তানের বাবা ও ৯ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আব্বাস বলেন, কিন্তু তারপরও কাবুল এখন আর কোনও নিরাপদ স্থান নয়। তিনি বলেছেন, তালেবানের যোদ্ধারা তার অফিসে পৌঁছে কর্মীদের বাড়িতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি এবং আইবাকের অন্যান্য বাসিন্দারা বলেছেন, মঙ্গলবার তারা তালেবানের যোদ্ধাদের দেখেননি এবং লড়াইয়ের কথাও শোনেননি।

গত কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল দেশটির সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ছিল; যেখানে তালেবানের উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। তালেবানের যোদ্ধারা দেশ দখলের কৌশলের অংশ হিসেবে এখন উত্তরাঞ্চলের দিকে নজর দিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তর, পশ্চিম এবং দক্ষিণাঞ্চলের পর রাজধানী কাবুলের কাছের শহরগুলো দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকারি বাহিনীকে হারিয়ে দেশের শাসন ক্ষমতা দখল এবং কঠোর ইসলামি আইন জারির লক্ষ্যে লড়াই করছে তালেবান। সোমবার সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাকের দখল নিয়েছে প্রায় কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই।

প্রত্যন্ত গ্রামীণ জেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে কঠোর লড়াইয়ের মুখোমুখি হওয়ায় এসব এলাকা থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। দেশটির সরকার এখন জনবহুল বড় শহরগুলোর তালেবানের হাতে পতন ঠেকাতে মনোনিবেশ করেছে।

পাশাপাশি দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা তালেবানের শক্তিবৃদ্ধি এবং পাক সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে রসদ সরবরাহ বন্ধ করতে প্রতিবেশি পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও তালেবানের প্রতি যেকোনও ধরনের সমর্থন এবং সহায়তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।

আফগান সরকারি বাহিনীর সমর্থনে তালেবানের অবস্থান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা শুরু করেছে। কিন্তু নিজেদের দেশ রক্ষার দায়িত্ব আফগান সৈন্যদেরই বলে জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। সোমবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা তাদের লড়াই।

তালেবান এবং আফগান সরকারি কর্মকর্তারা দেশটির উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি প্রদেশের রাজধানীর দখল বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

আইবাকের দক্ষিণ-পশ্চিমের বাঘলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরির আশপাশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। তালেবানের সদস্যরা এই শহরের একেবারে কাছাকাছি এলাকায় চলে আসায় সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

দেশটির জাতীয় দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের প্রধান গুলাম বাহাউদ্দিন জাইলানি রয়টার্সকে বলেছেন, আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ২৫টিতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে। গত দুই মাসে ৬ লাখের বেশি পরিবার বাস্ত্যুচুত হয়েছে; যাদের অধিকাংশই রাজধানী কাবুলে আশ্রয় নিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আফগানিস্তানের মোট ভূখণ্ডের ৬৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান। এছাড়া ১১টি প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর কাছে সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে তালেবানের যোদ্ধারা।

আপনি আরও পড়তে পারেন