নির্বাচনের কারণে চাকরি হারাতে পারেন, ধারণা মানিকের

নির্বাচনের কারণে চাকরি হারাতে পারেন, ধারণা মানিকের

স্বল্প বাজেটের দল নিয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। এর নেপথ্যে ছিলেন কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। সেই কোচকে লিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বরখাস্ত করায় ক্রীড়াঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল কৌতূহল। কোচ মানিক আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের তৃতীয় তলায় সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ জামাল ক্লাবে তার বিদায় ও বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।

গতকাল সকালে ক্লাবের এক কর্মকর্তা থেকে তিনি চিঠির বিষয়টি জানতে পারেন। সেই চিঠি যে তার বরখাস্তের সেটি ভাবতে পারেননি মানিক, ‘একজন কর্মকর্তা বললেন আপনার একটি চিঠি আছে। বাসায় পাঠাব কিনা। আমি বললাম বাসায় পাঠানোর দরকার নেই। ক্লাব থেকে নিব। সে বলল আপনার ক্লাবে আসার দরকার নেই। হোয়াটস অ্যাপে চিঠি পেয়ে দেখলাম শুধু লেখা শেখ জামালের সঙ্গে আমার আর সম্পর্ক নেই।’

শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেনি। তবে ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মনজুর কাদের তার প্রতি নাখোশ ছিলেন সেটি বক্তব্য দিয়ে স্পষ্ট করেছেন মানিক, ‘আরামবাগের সঙ্গে আমরা ঈদের একটি ম্যাচ হারি। সেই হারের পর গোলরক্ষক কোচ বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার সঙ্গেও খুব বাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তখন আমিই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর কাজ করব না। পদত্যাগপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে দেই। তারা সেটি গ্রহণ করেনি। এর মধ্যে দুইটি ম্যাচ জিতি। এরপর আবাহনীর সাথে ড্র। আবাহনীর ড্রয়ের পরেই সে এই সিদ্ধান্ত নিল।’

শেখ জামাল ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা কিংসের গতকাল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ ছিল শেখ জামালের সঙ্গে।শেখ জামালের ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় বসুন্ধরা গ্রুপ যুক্ত। পৃষ্ঠপোষক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কোনো নির্দেশনা বা অনুরোধেই কি ম্যাচের আগে মানিককে বরখাস্ত, এমন কানাঘুষা ফুটবলাঙ্গনে। এই প্রসঙ্গে মানিক বলেন, ‘এ রকম কিছু আমার জানা নেই। তবে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষকে আমি খুবই আন্তরিক দেখেছি। তারা খেলোয়াড়দের বেতন সুযোগ সুবিধা নিয়মিত প্রদান করেছে। ঈদের আগে শেখ জামালের সকল লোকাল খেলোয়াড় টাকা পেয়েছে। যেটা বাংলাদেশের খুব কম ক্লাবই করে। বসুন্ধরাকে আমি ধন্যবাদ জানাই তারা শেখ জামালের মতো বড় ক্লাবকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারা শুধু আর্থিক সাহায্য আর ব্যবস্থাপনার পার্টটা দেখে। দল পরিচালনা, নির্দেশনা, কোচিং স্টাফ ও দল গঠন এগুলো হয় গভর্নিং বডির মাধ্যমে।’

মানিক সর্বশেষ বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন। কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে মনজুর কাদেরের মাঝে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। এখন আবার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। মানিকের চাকরিচ্যুতির পেছনে নির্বাচনও একটি কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা হলেও হতে পারে। মাঝেমধ্যে কাদের ভাই বলেছেন কি নির্বাচন করলা। মানিককে এখনো কোচ রাখছো। এমন কথা শুনতে হয়।’

শেখ জামালের দায়িত্বে না থাকলেও ক্লাবের প্রতি ও ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন, ‘কাদের ভাই ফুটবলের দীর্ঘদিনের সংগঠক। ২০১৬ বাফুফে নির্বাচনের পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তিনি প্রায়ই বলেন, শেখ জামাল ক্লাবের খোঁজ রাখেন প্রধানমন্ত্রী, রেহানা আপা। আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলব, কাদের ভাইকে ক্লাবের অন্য দায়িত্ব দেওয়া হোক চেয়ারম্যানের পরিবর্তে।’

মনজুর কাদের হুটহাট সিদ্ধান্ত নেন। ইতোপূর্বেও অনেক কোচকে এভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। এই মানিকই তিন বছর শেখ জামালে কাজ করেছেন। আজ চাকরিচ্যুত হওয়ার পর এই মন্তব্য কেন এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে নিয়ে এ রকম কথা আমি আগেই বলেছি নিজস্ব বা ঘরোয়া আলোচনায়। কখনো গণমাধ্যম বা বাইরে বলিনি। এখন ক্লাবের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করছি এজন্য বলছি।’

আপনি আরও পড়তে পারেন