সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পারছেন না অসহায় বাবা

সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পারছেন না অসহায় বাবা

জন্মের তিন দিন পর নবজাতক সন্তান মারা যায়। সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী স্ট্রোক করে। বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইছি। কিন্তু এখনো সুস্থ হয়নি। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ধার করেছি। শেষে না পেরে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন রিকশাটাও বিক্রি করে দিছি। ঘরে ছোট ছোট দুইটা ছেলে আর বৃদ্ধ বাবা-মা। কারো মুখের দিকে তাকাতে পারি না। একদিকে অসুস্থ স্ত্রী কাতরাচ্ছে অন্যদিকে ক্ষুদার যন্ত্রণায় বাচ্চারা ছটফট করছে। কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মগরা বাদামতলা এলাকার কুদ্দুস আলী হাওলাদার।

জানা গেছে, গত ৫ মে জন্মের তিন দিন পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় কুদ্দুস আলী হাওলাদারের শিশুসন্তান। অসুস্থ হয়ে পড়েন তার স্ত্রী। স্ত্রীকে বাঁচাতে ভর্তি করেন বেসরকারি একটি ক্লিনিকে। স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোজগারের একমাত্র মাধ্যম রিকশাটিও বিক্রি করে দেন। রিকশা বিক্রি করে চিকিৎসা ও মানুষের দেনা কিছুটা পরিশোধ করলেও স্ত্রী-সন্তান আর বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে  অনাহারে দিন কাটছে তার। এই অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের মুখে দু-বেলা খাবার তুলে দেওয়ার জন্য সরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন হতদরিদ্র এই রিকশাচালক।

কুদ্দুস আলীর মা আছিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে খুব কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে। বউমা অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। শেষে মানুষের ধার শোধ করতে গিয়ে রিকশাটা বিক্রি করে দিছে। চার-পাঁচজন মানুষ নিয়ে খুব বিপদে আছি।আপনারা আমার ছেলের আয়ের একটা ব্যবস্থা করে দেন।

কুদ্দুস আলীর অসুস্থ স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, সিজারে আমার একটা মেয়ে হয়। মেয়েটা জন্মের তিন দিন পরে মারা যায়। এরপর আমি স্ট্রোক করি। আমার পেছনে টাকা খরচ করতে করতে আমার স্বামী আজ নিঃস্ব। ঘরে ছোট ছোট দুটো বাচ্চা, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি আছে। এখন না পারি ওষুধ কিনে খেতে, না পারি ঘরে রান্না করতে। এই অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় আলী আহমদ জানান, কুদ্দুস এখন খুব অসহায়। আগে রিকশা চালিয়ে কোনো রকম সংসার চালাতেন। এরপর ওর স্ত্রী অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম রিকশাটি বিক্রি করে দেন। আমরা এলাকাবাসীরা সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করি। কিন্তু স্থায়ী কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা না হলে ওদের না খেয়েই থাকতে হবে।

বাগেরহাটের মানুষের সমস্যা নিয়ে কাজ করা ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ প্রাণের বাগেরহাটের চিফ অ্যাডমিন শাওন পারভেজ বলেন, আমাদের ফেসবুক গ্রুপে কুদ্দুস হাওলাদার নামে একজন রিকশাচালকের সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য আসে। আমরা তাকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধ কিনে দিয়েছি। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে।

৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ মুকিত বলেন, কুদ্দুস আমাদের এলাকার ছেলে। তিনি আগে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কুদ্দুসের স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার পরে সে তার রিকশাটি বিক্রি করে দেয়। এতে তার উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, কুদ্দুস আলীর বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে খাদ্যসহায়তা দেবো। এ ছাড়া নিয়মের মধ্যে থেকে তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্যেরও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

আপনি আরও পড়তে পারেন