সরকারি কাজী না হয়েও ঝুলছে সরকারি কাজীর সাইনবোর্ড; প্রতারিত হবে সাধারণ মানুষ

সরকারি কাজী না হয়েও ঝুলছে সরকারি কাজীর সাইনবোর্ড; প্রতারিত হবে সাধারণ মানুষ

নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগরে কাজী মাও: বেলাল হোসাইন নামের এক ব্যক্তি সরকারী তালিকাভুক্ত কাজী না হয়েও ঝুলিয়েছেন সরকারী কাজীর ডিজিটাল সাইনবোর্ড। দীর্ঘদিন যাবত চালিয়ে আসছেন বাল্যবিয়ে দেওয়াসহ অবৈধ কাজীর কর্মকান্ড। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নে।

সরকারের তালিকাভুক্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) না হয়েও কাজী মাও: বেলাল হোসাইন অবৈধভাবে সরকারী কাজী হিসেবে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও প্রতারণা করার ফাঁদ পেতেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিতর্কিত এই কাজী আলোচিত ১টি হত্যা ও ২টি প্রতারণা মামলার চার্জসিট ভূক্ত আসামী। এবং এক সময়ে জেএমবির সক্রিয় সদস্য ছিলেন সে এমনও অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, বেলাল হোসাইন বড়গাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও তথ্য গোপন করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে কাশিমপুর ইউনিয়নের  নিকাহ্ রেজিস্ট্রার এর লাইসেন্স বাগিয়ে নেয়। জানতে পেরে ইউনিয়নের সরকারী নিকাহ্ রেজিস্ট্রার কাজী মোজাফ্ফর হোসেন উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত বেলাল হোসাইনের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। সম্প্রতি অত্র ইউনিয়নের সরকারের তালিকাভূক্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) মোজাফ্ফর হোসেনের রেজি: বাতিল হয়েছে মর্মে প্রচার করে বেলাল হোসাইন নিজেকে আসল কাজী হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

পরবর্তীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তররের সহকারী প্রোগ্রামারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তররের সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ কামরুজ্জামান গত ১৮আগষ্ট স্বাক্ষরিত (স্মারক নং ৫৬.৪৩.৬৪৮৫.০০০.১৬.০০১.২১.১/১) দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বেলাল কাজী ২০২১ সালের ২২জুন তারিখের হাইকোর্ট এর খারিজ মামলার ওয়েব রিপোর্ট দাখিল করেন। কিন্তু বিস্তারিত কোন তথ্য সেখান থেকে পাওয়া যায় না। আগের তথ্য মতে বেলাল কাজীর রেজি: আপাতত স্থগিত আছে এবং মোজাফ্ফর হোসেনের রেজি: বহাল আছে। তাই হাইকোর্ট এর চুড়ান্ত কপি না আসা পর্যন্ত মোজাফ্ফর হোসেন মূল কাজী হিসেবে কাশিমপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

কিন্তু তারপরেও বেলাল হোসাইন নিজেকে ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের সরকারী কাজী হিসেবে দাবী করে উপজেলা পরিষদ গেইট সংলগ্ন (ডাক বাংলা সংলগ্ন) ভাড়া বাসার সামনে ও উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে দুলালের চা স্টল সংলগ্ন স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন।

এই বিষয়ে বেলাল হোসাইনের মুঠোফোনে  বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন দিলে তিনি ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলছি বলে সংযোগটি কেটে দেন।

সরকারী তালিকাভুক্ত রেজিস্ট্রার (কাজী) কাজী মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে রিট পিটিশনের হালনাগাদ খবর নিতে পারিনি। তবে কোন কারণে ডিসচার্জ হয়ে গেলে আইনজীবীর সাথে আলোচনা করে শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি তদন্ত করা হয়। পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়ে দিবো।

জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন সরকারী কাজীর তালিকায় বেলাল হোসাইন নামে কোন ব্যক্তির নাম নেই। ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নে সরকারী কাজীর তালিকা হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন কাজী মোজাফ্ফর হোসেন। কিন্তু বেলাল নামে ওই ব্যক্তিটি কিভাবে দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে তা আমার জানা নেই। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন