রূপগঞ্জে মাটি চোর চক্র সক্রিয়

রূপগঞ্জে মাটি চোর চক্র সক্রিয়

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

 

রূপগঞ্জে এখনও মাটি চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমিসহ পূর্বাচল প্রকল্পের মাটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এ চোরচক্র। রাতের আধারে তো আছেই। দিনে দুপুরে বিভিন্ন এলাকার মাটি নিয়ে যাচ্ছে চোরের দল। লোকচক্ষুর সামনেই এসব ঘটলেও দেখার কেউ নেই।  কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। ফসল উৎপাদনও কমে যায়। কৃষকের দুঃখ দুর্ধশা বেড়ে যায়।
নির্মাণাধীন পূর্বাচল প্রকল্প থেকে দিনদুপুরে মাটি চুরি করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ ছাড়াও ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় সেনাবাহিনী পরিচালিত সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় চোরাকারবারিরা রাতে ভেকু চালিয়ে পূর্বাচল প্রকল্পের মাটি কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করে দিচ্ছে শহরের বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে।
জানা যায়, পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা এক হাজার ৩০০ একর জমির বেশির ভাগ ছিল টেক টিলা অঞ্চল। এতে চোর সিন্ডিকেট উঁচু টেকের মাটি কেটে নিচ্ছে প্রকাশ্যে। আবার এখানে শুধু দুই মৌজায় দুই হাজার প্লট তৈরি করতে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ গাছ কাটা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রানা সিকদার বলেন, পূর্বাচলের আশপাশের কারও মাটির প্রয়োজন হলে নির্মাণাধীন প্রকল্পের ঠিকাদারদের নিয়োগ করার লোকজনকে টাকা দিলেই মেলে মাটি। এভাবে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে মাটি চুরি হচ্ছে। এ মাটি চুরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ইছারমাথা জাতীয় ট্রাক্টর আর ঠিকাদারদের ভেকু ও ড্রামট্রাক।
দাউদপুরের কালনী এলাকায় সোহেল নামের এক ব্যক্তি তার ভেকু দিয়ে দিনদুপুরে মাটি কেটে বিক্রি করলেও রহস্যজনক কারণে তা বন্ধে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। তবে অভিযুক্ত সোহেলের দাবি, এসব মাটি রাজউকের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই কাটা হয়। এ ছাড়াও কোনো পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজের বিষয় অস্বীকার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক পূর্বাচলের ইনচার্জ রাজু মিয়া বলেন, আমি নতুন এ এলাকায় কাজ করছি। মাটি চুরি সিন্ডিকেট বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখব।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বাস বিল্ডার্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রকৌশলী মনসুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা ৩০০ ফুট সড়ক উন্নয়নের কাজ করছি। এখান থেকে অপ্রয়োজনীয় মাটি ও পাথর সরিয়ে নির্ধারিত স্থানে জমা করে রেখেছি। ওই জমাস্থান থেকে একটি কুচক্রী মহল গোপনে মাটি চুরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, পূর্বাচল দেশের সবচেয়ে বড় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। ছয় হাজার ১৫০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত ওই প্রকল্পে ২৬ হাজার প্লট ও ৬২ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। এখানে বিভাগীয় ঠিকাদার ও কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকা দেখভাল করে থাকেন। সেখানে মাটি চুরি বিষয়ে সংবাদ পেয়েছি। কোনো অবস্থাতেই পূর্বাচল প্রকল্পের মাটি শহরের বাইরে বিক্রি বা নেওয়ার নিয়ম নেই। এসব কাজে জড়িত কোনো কর্মকর্তার অবস্থান প্রমাণিত হলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তা ছাড়া পুরো প্রকল্পের মাটি ও গাছ চুরি রোধে রাজউক চেয়ারম্যানকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, শুধু পূর্বাচল নয়, উপজেলার কোথাও কাউকে এ ধরনের হীন কাজ করতে দেয়া হবে না। এ ধরনের অন্যায় কাজ যে কেহ করে থাকুক তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন