বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া হরিনাকুন্ডর বাউলঃ জন্মভূমি মনে রাখেনি যাকে

বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া হরিনাকুন্ডর বাউলঃ জন্মভূমি মনে রাখেনি যাকে
সুদিপ্ত সালাম, হরিনাকুন্ডু থেকে
লালন ভাবসঙ্গীত ও অন্যান্য মরমী গানের জগতে শুকচাঁদ সাঁই এর অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয়।  লালন-উত্তর মরমি ভাবুকতার অন্যতম প্রধান পুরুষ তিনি। যে সব সাধক-মহাজন মরমি দর্শন, ভাবুকতা ও সঙ্গীত জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেন,শুকচাঁদ সাঁই তাদের মধ্যে অন্যতম। গুরুতত্ত্ব, মানুষতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক অনেক গানের রচয়িতা তিনি।
কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গীতজ্ঞ মহলে শুকচাঁদ সাঁইয়ের নাম বিশেষভাবে শোনা গেলেও তার জম্মভূমি হরিনাকুন্ডুর মানুষ চেনেনা তাকে। খোদ তার জন্মস্হান চটকাবাড়িয়ার মানুষের কাছেও  অপরিচিত তিনি!
মরমী সাধক কবি শুকচাঁদ সাঁই এর অনেক শিষ্য ছিলেন। এর মধ্য হরিনাকুন্ডুর ভবানীপুরের খোরশেদ সাঁই, চটকাবাড়িয়ার জিন্নাতুল্লাহ লস্কর, ইলেশমারীর ভেলু সাঁই, মেহেরপুরপর ঝড়ু সাৃই অন্যতম।
লালনগীতির অন্যতম প্রধান শিল্পী ও তত্ত্বজ্ঞ খোদা বক্স বিশ্বাসও শুকচাঁদ সাঁই এর শিষ্য ছিলেন।
শুকচাঁদ সাই হরিণাকুন্ডু উপজেলার চটকাবাড়িয়া গ্রামে ১৮৮৭ সালে (১৩১৪ সন) জম্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শীতল মন্ডল। শুকচাঁদের আসল নাম শুকুর মন্ডল। ফকিরি মত গ্রহণের পর তিনি ‘শুকচাঁদ’ নামে পরিচিত হন। বাল্যকালে তিনি কোন বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ পাননি। হরিশপুরের আলীম সাঁই এর আখড়ায় অনুষ্ঠিত ভাব সঙ্গীতের আসরে অমুল্য সাই এর গান শুনে শুকচাঁদ অমূল্য শাহের গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। অমূল্য শাহ তাঁকে সঙ্গীত শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। অল্পদিনে শুকচাঁদ ভাব সঙ্গীতের একজন দক্ষ শিল্পী হিসেবে গড়ে ওঠেন। বিভিন্ন আসরে তিনি ভাবসঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন এবং দ্রুত তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি তার সঙ্গীত গুরু অমূল্য শাহের কাছে দরবেশী দীক্ষা গ্রহণ করেন। শুকচাঁদ অমূল্য শাহের কাছে লালন সঙ্গীতের তালিম নেন। সে সময় হরিশপুরের তিন মাইল উত্তরে হরিয়ারঘাটের খোদাবক্স ছিলেন লালন ভাব সঙ্গীতের ভান্ডারি। শুকচাঁদ সাঁই খোদাবক্সের সাথে যোগাযোগ করে অনেক লালন ভাবসঙ্গীত আত্মস্হ করেন এবং একজন বিশিষ্ট ভাব সঙ্গীত শিল্পী হয়ে ওঠেন।
শুকচাঁদ সাঁই বনু ফকিরানি নামের একজনকে সাধক সঙ্গীনি হিসেবে গ্রহন করেন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে আখড়া বাড়ি স্হাপন করেন।
শুকচাঁদের ভাবসঙ্গীতের সংখ্যার পরিমান বেশি না হলেও গানগুলোর গুনগত মান অতুলনীয়। তাঁর একটি গানে আছে-‘জানগা আগে মানুষের বেনা/মানুষের নাই জাতির বালাই/ মানুষ ভজলে যায় রে জানা’।
শুকচাদ সাঁই এর জীবনাচারন  ও কর্ম  সংরক্ষণে স্থানীয় বা সরকারিভাবে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। তার রচিত গানগুলো সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করা গেলে বাংলা গান আরো সমৃদ্ধ হতে পারত।
এই মহান শিল্পী তার জন্মস্হান হরিনাকুন্ডুর মানুষের  কাছে বহুকাল ধরে অখ্যাত হয়ে থাকলেও সম্প্রতি তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্হানীয় অধিবাসী বিপ্লব হোসেন বলেন, শুকচাদ সাঁই আমাদের গর্ব। চটকাবাড়িয়া গ্রামবাসী চান শুকচাদ সাঁই এর গানসহ সকল বিষয় সংরক্ষণ করা হোক এবং তার জন্মস্হান চটকাবাড়িয়াও আলোচনায় আসুক।

আপনি আরও পড়তে পারেন