যশোরে নিত্যপণ্যের বাজার আকাশছোঁয়া

আবেদ হোসাইন, যশোর প্রতিনিধি : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ এক প্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কাঁচাপণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যসামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। পাইকাররা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানার একমাত্র উপায় আমদানি পণ্যের শুল্ক কমানো। এ ছাড়া কোনোভাবেই কমবে না জিনিসপত্রের দাম।
ইতিমধ্যে লাগামছাড়া হয়েছে তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য। একই অবস্থা কাঁচা পণ্যেও। সবজির বাজারেও প্রবেশ করা দায় হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। কোনো সবজির দাম ৩০ টাকার নীচে নেই। দু’ একশ’ টাকায় ভরছে না বাজারের ব্যাগ।
ভোক্তারা বলছেন, খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। এ কারণে খাদ্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। এসব কারণে অবিলম্বে বাজার মনিটরিং করার দাবি জানিয়েছেন তারা।  বাজারের আগুনে পোড়া অনেক মানুষ।
অপরদিকে, বিক্রেতারা বলছেন, সরকারকে মজুতদারদের খুঁজে বের করতে হবে।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কথা হয় হাজি আলী স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মোস্তাকের সাথে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর সব দেশ আমদানি শুল্ক কমায়।
কম বেড়েছে রসুন-আদার দাম
৩০ টাকার রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। তবে, ৩০ টাকায়ও রসুন বিক্রি হচ্ছে। তার মান একটু কম। বেড়েছে আদার দামও। প্রতি কেজি আদায় বেড়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা।
আলুর দাম একদম বাড়েনি
অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি আলুর দাম। অথচ এই আলুর ব্যবহার সবকিছুতে। গতকাল আলু খুচরা বিক্রি হয়েছে ২২ টাকা কেজি।
সয়াবিন তেলের বাজার সবচেয়ে গরম। এই বাজারে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। তেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বর্তমানে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে একশ’ ৫৫ টাকা ৯৪ পয়সা। একশ’ ৮৫ কেজির এক ব্যারেল সয়াবিন তেল ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় প্রতি কেজির দাম এমন পড়ছে। আর খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে একশ’ ৬০ টাকা কেজিতে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে অন্তত ১৫ টাকা বেশি। কোম্পানি ভেদে বোতলজাত তেলের দাম কমবেশি রয়েছে।
যশোর শহরের গোহাটা রোডের অন্যতম বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাজি আলী স্টোরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ২০-২৫ দিন ধরে তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা। সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় আমেরিকা ও ব্রাজিল থেকে। প্রতিকেজি সয়াবিন তেলের আমদানি শুল্ক ২৭.৫০ টাকা বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এই শুল্ক না কমানো পর্যন্ত তেলের দাম কমবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
চিনিতে বেড়েছে ১৫ টাকা
বাজার ঘুরে জানা গেছে, যশোরের বাজারে ৫০ কেজির চিনির বস্তা তিন হাজার আটশ’ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পাইকারি। ২০ দিন আগে যার দাম ছিল তিন হাজার সাতশ’ ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ছিল ৭৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বেড়েছে চিনির দাম। চিনি তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্রুড আমদানি করা হয় ব্রাজিল থেকে। প্রতি কেজি চিনির আমদানি শুল্ক ২৬ টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে দেশীয় বাজারে চিনির দাম অত্যধিক। তারা বলছেন, আমদানি শুল্ক অর্ধেক করলেও প্রতি কেজি চিনির দাম কমবে ১৩ টাকা। যা মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে।
একশ’ ১০ টাকায় মসুর ডাল
মসুর ডাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৮৪ টাকায়। এটিও বাইরে থেকে আমদানি করা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি মসুর ডালে বেড়েছে চার-পাঁচ টাকা। তবে, খুচরা বাজারে এর দাম আরও বেশি। খুচরা বাজারে মোটা মসুর ডাল ৯০ এবং চিকন ডাল একশ’ পাঁচ থেকে একশ’ ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের আগুনতাপ  সবজির
বেড়েছে কাঁচা পণ্যের দামও। অন্য সব নিত্যপণ্যের সাথে আগুন লেগেছে সবজির বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ক্রেতারা। যশোরের বড়বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে উচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ টাকা ছিল। বর্তমানে তার দাম ৮০ টাকা। টমেটো কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১০০ টাকায় ঠেকেছে। ঝিঙে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে এখন ৪০ থেকে ৫০টাকা, পটল কেজিতে ১০টাকা বেড়ে এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কুশিতে ১০ টাকা বেড়ে বর্তমান দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। বরবটির দাম ১০ টাকা বেড়ে ৭০, লাউ ১০ টাকা বেড়ে প্রতি পিছ কমপক্ষে ৪০, চালকুমড়া পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া পাঁচ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বাধাকপি, বেগুন, লতি, কচুরমুখি, কাঁচকলা, ওল, পেঁপে ও ধুন্দলের দাম। কিছুটা কমেছে শসা, শিম ও মুলার একশ’২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন