কেমন আছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মানুষেরা

কেমন আছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মানুষেরা
সুদিপ্ত সালাম, হরিনাকুন্ডু প্রতিনিধি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের প্রকল্প কমিউনিটি ক্লিনিক। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন চার লাখের বেশি মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও পুষ্টিসেবা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ২৭ ধরনের ওষুধ গ্রামের প্রান্তিক মানুষের নিকট বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে ।  এই সেবাসমূহ কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগপ্রাপ্ত হেলথ প্রোভাইডারগন সুচারুরূপে সম্পাদন করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন । বাংলাদেশের  কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্যগাথা নিয়ে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: হেলথ রেভল্যুশন ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে।
তবে পরিতাপের বিষয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ১৪ হাজার সিএইচএসপি ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সেবার মত অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনবদ্য অবদান রাখার পরও তাদের চাকুরী স্হায়ীকরণ করা হয়নি। চাকুরীর শুরু হতে অদ্যবধি বাড়েনি তাদের বেতন, পাননি আনুষাঙ্গিক কোন সুবিধাদিও।
জানা যায়, সরকার ২০১১ সালে ১৩ হাজার ৫০০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সমসংখ্যক হেলথ প্রোভাইডার নিয়োগ দেন । তাদের এই নিয়োগের পর পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ  দশটি বছর। বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে উন্নয়নের মহাকাব্য রচিত হলেও অবহেলিত থেকে গেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক চাকরিরত প্রায় ১৪ হাজার সিএইচএসপি, যার ভেতরে আছেন ৬০ শতাংশ নারী ও ৪ হাজার ৫০০ জনেরও অধিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ।
ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলায় অবস্হিত ক্লিনিকগুলোতে ২৩ জন হেলথ প্রোভাইডার কর্মরত আছেন। দীর্ঘ এক দশক ধরে সততা, একাগ্রতা, বিচক্ষণতা ও নিরলস পরিশ্রম দ্বারা স্বাস্হ্য খাতের চেহারা পাল্টে দেওয়া এইসব হেলথ প্রোভাইডরদের  চাকুরী স্থায়ীকরন না হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। জানা যায়, মহামান্য হাইকোর্ট কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকুরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য রায় দিলেও সে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের প্রেক্ষিতে সে রায় স্থগিত হয়ে যায় । এতে আটকে যায় হেলথ প্রোভাইডারের চাকুরী স্হায়ীকরণ প্রক্রিয়া।
বিগত দশ বছর ধরে ক্রয় ক্ষমতার নিরিখে দেশের সর্বক্ষেত্রের চাকুরীজীবিদের বেতন-ভাতা কয়েক দফা বাড়লেও কোনরূপ বৃদ্ধি হয়নি সিএইচসিপি’দের বেতন। তাদের  পদোন্নতি ব্যবস্হা নেই, গ্র্যাচুইটি ও অবসরভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই।
 করোনাকালীন সময়ে ঝুকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করলেও এই সব সিএইচসিপি’রা  থেকেছেন প্রণোদনা বঞ্চিত। নিয়মিত মাসিক বেতন হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে সিএসএইচপি’দের।
চলতি বছরে স্বাস্হ্যকর্মীদের বহুল প্রত্যাশিত ‘স্বাস্হ্য সহায়তা ট্রাস্ট’ আইন প্রনয়ন হলেও অদ্যবধি তার বাস্তবায়ন না হওয়াতেও হতাশ হয়ে পড়ছেন অনেক হেলথ প্রোভাইডার। স্বাস্হ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এর বিরুপ ফলাফলও ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে  সরকার দেশের ৮০ শতাংশ গ্রামীণ দরিদ্র নারী ও শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন ।
দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডারগন শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ২ টা পযন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় চার লাখেরও বেশি মানুষকে বিভিন্ন স্বাস্হ্যসেবা দিয়ে থাকেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসবপূর্ব টিকাদান এবং প্রসব পরবর্তী নবজাতকের সেবাসহ যক্ষ্মা রোগের প্রতিষেধক টিকাদান, হাম, পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইসিস-বি এর  টিকা প্রদান করা হয়।এছাড়াও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সীমিত চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে।
হেলথ প্রোভাইডারদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা,আন্তরিকতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে সারা দেশের গ্রামের মানুষের ঘরের দোরগোড়ায় আজ পরম বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে  ক্লিনিকগুলো।
কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার চলমান মানকে ধরে রাখতে হেলথ প্রোভাইডারদের চাকুরী স্হায়ীকরণসহ তাদেরকে সময়োপযোগী অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
হরিনাকুন্ডু উপজেলা কমিউনিটি  এর সভাপতি মাহবুব মোর্শেদ বিপু বলেন, প্রায় দীর্ঘ এক যুগের কাছাকাছি আমরা একই বেতনে চাকরি করছি। আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব,সরকার প্রায় ১৪ হাজার সিএইচএসপি দের চাকরি স্হায়ী করনের বিষয়টিও যেন গভীরভাবে বিবেচনা করে সে ব্যাপারে সুদৃষ্টি কামনা করি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা জামিনুর রশিদ বলেন, জাতির জনকের স্বপ্নের কমিউনিটি ক্লিনিকে হরিনাকুন্ডুতে যারা সেবা দেন তাদের সেবার মানে আমরা সন্তুষ্ট। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্হ্য সেবা পৌছে দেওয়া এই সব হেলথ প্রোভাইডারদের চাকরি স্হায়ী করনের ব্যাপারে অবশ্যয় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
অন্যথায় এমন অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কমিউনিটি ক্লিনিক তার জৌলুস হারাবে। সঙ্গে হারাবে এক ঝাঁক দক্ষ জনবল।

আপনি আরও পড়তে পারেন