আ. লীগের মনোনয়ন পেতে বিএনপি নেতার জন্য সুপারিশ!

আ. লীগের মনোনয়ন পেতে বিএনপি নেতার জন্য সুপারিশ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যুবদল নেতা আজহারুল হক চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সুপারিশের অভিযোগ ওঠার পর এবার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য এক বিএনপি নেতার নাম সুপারিশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সোলাইমান মিয়া একসময় তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে অনুপ্রবেশকারী উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও সোলাইমান মিয়া পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ করেন বলে দাবি করেছেন।

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য যুবদল নেতা আজহারুল হক চৌধুরীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় মনোয়ন বোর্ডের কাছে পাঠায় জেলা আওয়ামী লীগ।

সুপারিশপত্রে আজহারুলকে গোয়ালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি নাসিরনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য। আর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কিরণ মিয়া। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কিরণ মিয়া। প্রথমে আজহারুলকে মনোনয়ন দিয়ে পরে আবার বাতিল করে কিরণ মিয়াকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।

সূত্র জানায়, তালশহর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নের জন্য তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। এর মধ্যে সোলাইমান মিয়ার নামও রয়েছে। ২০১৭ সালে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য পদ পাওয়া সোলাইমানকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে হালে তিনি এখন আওয়ামী লীগ নেতা। নিজেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও দাবি করেন তিনি।

বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর তালশহর ইউনিয়ন বিএনপির যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল, সেখানে সদস্য হিসেবে সোলাইমান মিয়া ও তার বড় ভাই হারুন অর রশিদের নাম আছে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১ মে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে কমিটি হয়, সেখানে সোলাইমান মিয়াকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে সোলাইমানকে অনুপ্রবেশকারী উল্লেখ করে বহিষ্কার করে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।

তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নিয়াজ আকতার বলেন, সোলাইমানকে কখনো আওয়ামী লীগ করতে দেখিনি। তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার ভাই হারুন বিএনপির পৃষ্ঠপোষক। সোলাইমানকে কীভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সুপারশি করা হয়েছে, সেটি বোধগম্য হচ্ছে না।

তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের কমিটি ২০১৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে হয়েছে এবং সেটি উপজেলা ও জেলা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। সোলাইমান মিয়া বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। পরবর্তীতে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানিয়ে একটি পকেট কমিটি করেছেন। কিন্তু এটির বৈধতা নেই।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সোলাইমান মিয়া বলেন, আমি কখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। জন্মগতভাবেই আওয়ামী লীগ করি। ওইভাবে হয়তো রাজনীতিতে জড়াইনি। ২০১৭ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের কমিটিতে রেখেছিল। ২০১৯ সালে আমি কমিটির সভাপতি হয়েছি।

আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাছের আহমেদ জানান, সোলাইমান মিয়া বিএনপি করতেন, এটা সঠিক। সে জন্য আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার পর তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। তাহলে সোলাইমানকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য কেন সুপারিশ করা হলো, জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। সোলাইমানের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন