দোহার নবাবগঞ্জে উৎসব মুখর বড়দিনের প্রস্তুতি

দোহার নবাবগঞ্জে উৎসব মুখর বড়দিনের প্রস্তুতি

২৫ ডিসেম্বর খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র বড়দিন। আর মাত্র দুদিন বাকি। তাইতো ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাসহ আঠার গ্রামের খ্রীষ্টান পল্লীর পরিবার গুলো মহাব্যস্ত।

বাড়িতে বাড়িতে চলছে সাজসজ্জা। অতিথিদের নিমন্ত্রন করা হচ্ছে ই-মেইল, ক্ষুদে বার্তা, ইমু, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, কার্ডসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুধু খ্রীষ্টান সম্প্রদায় নয় ঐসব এলাকার হিন্দু ও মুসলিম পরিবার গুলোকেও দাওয়াত করতে ভুল করছেন না তাঁরা। অতিথি আপ্যায়নে কোন রকমের ত্রুটি না রাখতে বাড়ি বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে রকমারী পিঠাপুলি।

Carrier ac

তবে বড়দিনের অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে কেক কেই প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রতিটি বাড়ির সামনে সাজানো হচ্ছে ক্রিসমাসট্রি। শিশুদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত সান্তাক্রুসের উপহার পেতে আবেগ আপ্লুত হয়ে আছে শিশুরা। অপেক্ষার দিনক্ষণ শেষ হতে বেশি সময় দেরি না হলেও মহাব্যস্ত এ এলাকার খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের পরিবার গুলো।

এদিকে, গ্রামের গীর্জা ও উপধর্মপল্লী গুলোকে সাজানো হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঝলমলে আলোক সজ্জায়। দোহারের ইকরাশী উপধর্মপল্লী, নবাবগঞ্জের সোনাবাজু উপধর্মপল্লী, হাসনাবাদ গীর্জা, গোল্লা গীর্জা, তুইতাল গীর্জা, বক্সনগর গীর্জার প্যারিস কমিটির তৎপরতাও তাই বেড়েছে। গীর্জার অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন ভাবে ডিসপ্লে করা হবে কুড়ে ঘরের ভিতর মাদার মেরীর কোলে যিশুখ্রীষ্টের মুর্তি। গীর্জায় প্রার্থনায় করতে আসা পূণ্যার্থীদের আগমন নিরবিচ্ছিন্ন করতে তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ ভলান্টিয়ার টিম। সব মিলিয়ে আগাম উৎসব চলছে খ্রীষ্টান অধ্যষিত গ্রাম গুলোতে।

অন্যদিকে, বড়দিন উপলক্ষে এলাকা নবাবগঞ্জের বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর তৈরি পোশাক মার্কেট গুলোতে ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতাদের আনাগোনা চলছে।

নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ গ্রামের রতন ডি কস্তা জানান, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই প্রতিটি পরিবারে বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমিও পরিবার পরিজন নিয়ে জাকজমকপূর্ণ উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। সেই সাথে আসছে ইংরেজী নতুন বছরে দেশ ও দেশের মানুষের শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করছি।

দোহারের ইকরাশি গ্রামের লুইস পল গমেজ জনি জানান, ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যে পরিবার নিয়ে বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতি মধ্যে নতুন পোশাক কেনাকাটা হয়ে গেছে। এলাকার হিন্দু, মুসলামান বন্ধুদেরও দাওয়াত করেছি।

Sony Smart TV - 2022 offer
Sony Smart TV – 2022 offer

খ্রীষ্টান অধ্যষিত বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিল্লাল মিয়া জানান, বান্দুরা ইউনিয়নের মুসলমান, হিন্দু ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বসবাস। আমরা অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণভাবে বসবাস করছি। বড়দিন এলে এখানে সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ গির্জার প্যারিস কমিটির সহ-সভাপতি সেলেস্টিন রোজারিও জানান, নবাবগঞ্জ, দোহার ও সিরাজদিখানের আঠার গ্রামের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মূল কেন্দ্র হাসনাবাদ জপমালা রানীর গীর্জা। এর ৭ গ্রামের মূল অনুষ্ঠান হাসনাবাদে হয়ে থাকে। ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকে আমাদের ধর্মীয় আচার শুরু হবে।

জানা যায়, নবরাজ খ্রীষ্টকে গ্রহন করতে বড়দিনের ৯দিন আগে থেকে নভেনা খ্রীষ্ট যাগ বা পাপস্বীকার পর্ব চলে। দোহার, নবাবগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবারে উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ উৎসব বড় দিনের কির্তনের (ক্যারল) মধ্যে দিয়ে শেষ হবে।

নবাবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, নিরাপত্ত্বার স্বার্থে প্রতিটি উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ঠদের সাথে মতবিনিময় করছি। গীর্জা ও এর আশপাশে সর্বাত্মক নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করা হবে। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়েছে।
তাছাড়া প্রতিটি উপসনালয় ও এর আশপাশে নিজস্ব ভলান্টিয়ার টিমসহ সাদা পোশাকের পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মোতায়েন থাকবে। জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে উপাসনালয়ে শুভেচ্ছা উপহার দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দীন মনজু ও দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম ফিরোজ মাহমুদ বলেন, বড়দিন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগীতা করবে। নিরাপত্ত্বার দায়িত্বে পুলিশের বিশেষ টিম মাঠে থাকবে। তাছাড়া বিশেষ দিনটিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপাসনালয়ে শুভেচ্ছা উপহার দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন