শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ

শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ

মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ শরণখোলা প্রতিনিধিঃ
শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। তিন চিকিৎসক নিয়মিত শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বেতন- ভাতা তুললেও দীর্ঘদিন ধরে ডেপুটেশনে রয়েছেন বাগেরহাট ও খুলনায়। এতে নিরুপায় হয়ে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। অনেকে আবার বেশি টাকা খরচ করে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন প্রাইভেট হাসপাতালে।
অন্যদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় রোগী দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি এবং ডা. নাদিরা নওরিন তার মায়ের অসুস্থতাজনিত কারনে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছুটিতে আছেন। মাত্র একজন চিকিৎসক থাকায় বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ও ভর্তি রোগীদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে ডা. এসএম ফয়সাল আহমেদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন্ট, মেডিসিন, সার্জারী, গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ সহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৬ জন কাগজে কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩জন। বাকি ১০ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। গত ৩ জুন ২০২১ থেকে ডা. সিরাজুল ইসলামকে ডেপুটেশনে র‌্যাব-৬ কার্য্যালয়ে, প্রায় দু’মাস ধরে ডা. আরিফুল ইসলাম রাকিব খুলনা শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ও গত নয় মাস আগে ডা. আসিফ আদনান শরণখোলায় যোগদান করলেও ডেপুটেশনে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন।

ডেপুটেশনে থাকা তিন চিকিৎসক শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকুলে নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন। যে কারনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক নিয়োগ দিচ্ছেন না বলে একটি সূত্র জানায়। এছাড়া চিকিৎসক সংকট থাকার পরেও ডাক্তার গোলাম মোক্তাদিরকে গত ৪ জানুয়ারী ঢাকা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলী করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড বয় তিন জন থাকার কথা থাকলেও আছে দুই জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঁচ জনের স্থানে আছে একজন, আয়া নেই। অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে সরকারের মূল্যবান প্রায় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম ফয়সাল আহমেদ জানান, ডা. নাদিরা নওরীন ছুটিতে থাকায় ও ডাক্তার গোলাম মোক্তাদির বদলী হওয়ায় আমার একার পক্ষে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

শরণখোলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, ডাক্তার সমস্যা সমাধানে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করার পরেও একজন ডাক্তার বদলী হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ইতোমধ্যে বিষয়টি বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে। পাশ্ববতী উপজেলা মোড়েলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন চিকিৎসক শরনখোলায় দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুঞ্জুরুল মুর্শিদ জানান, শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত তিন চিকিৎসকের ডেপুটেশনে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে তিনি অবগত নন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে অতি শীগ্রই প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন