রাণীনগর চার পরিবার সাত মাস ধরে একঘরে; সাংবাদিকদের জানানোর কারণে মারপিটে

রাণীনগর চার পরিবার সাত মাস ধরে একঘরে; সাংবাদিকদের জানানোর কারণে মারপিটে

নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগরে জমির মালিকানা বিরোধের জের ধরে চারটি পরিবারকে সাত মাস ধরে এক ঘরে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ইটের প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চার পরিবারের চলাচলের রাস্তা। এঘটনার সুষ্ঠ প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেও গত তিন মাসে প্রতিকার মেলেনি ভুক্তভোগি পরিবারগুলোর।
এছাড়া এই বিষয়টি গনমাধ্যমকর্মীদের জানানোর অপরাধে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রভাবশালীরা ভুক্তভোগী রমজান ও কালামকে বেদম মারপিট করে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় রমজানকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। রমজানের অবস্থা আরও গুরুত্বর হলে রোববার তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের বড়খোল গ্রামে।

ভুক্তভোগী বড়খোল গ্রামের আকবর দেওয়ানের ছেলে ছামছুর দেওয়ানসহ পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে ছামছুর দেওয়ানের পরিবারের জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গ্রামের মাতব্বর প্রধান এবং ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জায়গা ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে পার্শ্বে খাস জমিতে বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব নাকচ করার কারণে গত সাত মাস আগে গ্রামের মাতব্বর আব্দুল করিম, রিয়াজুল ইসলাম, বেলাল ও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনসহ লোকজন নিয়ে ছামছুর দেওয়ানের পরিবারের সদস্য মোমেনা বিবির ঢোক দোকান ঘর ভেঙ্গে দেয়। এরপর মাতব্বররা ছামছুর দেওয়ান, ভাই উজ্জল দেওয়ান, শরিকান রমজান দেওয়ান এবং মোমেনা বিবিসহ চার পরিবারকে এক ঘরে করে রাখে। এরপর আমরা জায়গার মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা দিয়েছি।

ছামছুর দেওয়ান আরো জানান, মাতব্বর রিয়াজ দেওয়ান নিজে এসে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনকে এক ঘরে করে রাখার বিষয়টি জানায়। এছাড়া সমাজের কোন লোকজন ওই চার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে,ছামছুর দেওয়ানের ভ্যান গাড়ীতে যাতায়াত করতে,দোকান থেকে কোন জিনিস ক্রয় করতে এবং মসজিদে নামাজ পরতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়। নির্দেশনা ভঙ্গ করলে তার এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও তারা ঘোষনা দেয়। এমন নির্দেশনার পর থেকে গ্রামের কোন লোকজন তাদের সাথে কথা বলেনা এবং দোকান থেকে কোন জিনিসপত্র বা ওষুধও বিক্রি করেনা এবং ভ্যান গাড়ীতেও কেউ যাতায়াত করেনা। এছাড়া বিদ্যালয়ের জায়গা দাবি করে ছামছুর দেওয়ানসহ চার পরিবারের লোকজনের চলা-চলের রাস্তা ইটের প্রাচির দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে বাড়ী থেকে বের হতে হচ্ছে প্রাচির টপকে। ফলে ২১জন সদস্য নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ওই চার পরিবার।

ওই গ্রামের শাহিন হোসেন, ইকবাল হোসেন, খায়রুল ইসলাম প্রামানিক জানান, স্কুলের সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে। কয়েকবার বসেও সমাধান হয়নি তাই মাতব্বরদের নির্দেশে সমাজ থেকে তাদেরকে এক ঘরে করে রেখেছে। যে কারনে আমরাও কথা বলিনা।

এঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে ছামছুর দেওয়ান নওগাঁ জেলা প্রসাশক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে  গত ২৭ অক্টোবর/২১ জেলা প্রসাশক রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে “ব্যক্তিগত ভাবে দেখে অবহিত” করার নির্দেশ দেন। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল তদন্ত করে আসলে গত তিন মাসেও কোন সুষ্ঠু প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রামের প্রধান মাতব্বর আব্দুল করিম, রিয়াজ উদ্দীন এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এক ঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ছামছুর দেওয়ানরা খারাপ মানুষ। যে কারনে গ্রামের কোন লোকজন ঘৃনা করে ওদের সাথে কথা বলেনা। এছাড়া ওরা নিজেরায় নিজেদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছে। আমরা তাদেরকে বন্ধ করিনি।

মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মো. জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, কেউ বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন আকন্দ জানান, একঘরে করে রাখা এবং মারপিটের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো জানান, জেলা প্রসাশকের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং উভয় পক্ষকে আমার দপ্তরে ডেকেছি। আসা করছি তারা আসবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন