জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যার রহস্য উন্মোচন, গ্রেপ্তার ৩ জন

জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যার রহস্য উন্মোচন, গ্রেপ্তার ৩ জন
হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)  স্টাফ রিপোর্টারঃ
জগন্নাথপুরে ফার্মেসি থেকে জ্যোৎস্না(৩৪) এর ছয় টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানাল সিআইডি।
এ ঘটনায় শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ, তার বন্ধু অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত চন্দ্র গোপকে।
আজ ১৯ শে ফেব্রুয়ারী  শনিবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকার ব্যারিস্টার আবদুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না(৩৪) ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জ্যোৎস্না জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত  নারকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছুরুক  মিয়ার স্ত্রী তিনি জগন্নাথপুর পৌর শহরে নিজ বাসায় দুই মেয়ে ও এক ছেলকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
এ ঘটনায় এই দিনই নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা নম্বর-০৮/১৫।
সিআইডি জানায়, শাহনাজ জোসনা ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহরে নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদেরকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে মুক্তাধর জানান, ওষুধপত্র কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সাথে জ্যোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জ্যোৎস্না কিছুদিন ধরে গোপন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জ্যোৎস্নার মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যান। তখন জ্যোৎস্না তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে তিনি তাকে দোকানে যেতে বলেন। এই দিন বিকালে জ্যোৎস্না জিতেশের দোকানে গেলে তাকে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
মুক্তাধর আরও জানান, অনেক রাত হলে বাসায় যাওয়ার জন্য জ্যোৎস্নার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে তাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেন জিতেশ। এতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জোসনা। তখন জিতেশ, তার দুই বন্ধু অনজিৎ এবং অসীত গোপ তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। জিতেশ তার ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কক্ষে জ্যোৎস্নাকে বসিয়ে রাখেন। সেখানে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাকে ঘরে রেখে ফার্মেসির তালা বন্ধ করে বাইরে চলে যান জিতেশ।
এরপর রাত গভীর হলে আশেপাশের দোকান যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন জিতেশ ও তার দুই বন্ধু ফার্মেসী খুলে এনার্জি ড্রিংকস পান করে ধর্ষণ করেন।
বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারকে জানিয়ে দেবেন বললে জিতেশ ও তার বন্ধুরা তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে লাশটি দুই হাত, দুই পা এবং বুক পেটসহ ছয়টি টুকরা করেন। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মসিতে তালা লাগিয়ে চলে যান। পরে খণ্ডিত লাশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর আরো বলেন, এই ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অনজিৎ এবং অসীত গোপকে।
গ্রেপ্তারকৃত জিতেশ চন্দ্র গোপ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার শহিলা গ্রামের যাদব চন্দ্র গোপের ছেলে, অনজিৎ চন্দ্র গোপ একই এলাকার রসময় চন্দ্র গোপের ছেলে ও অসীত চন্দ্র গোপ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর অলিপুর গ্রামের পতিত পবন গোপের ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সিআইডির বিশেষ সহকারী পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহজাহান খান।

আপনি আরও পড়তে পারেন