ফকির নুরুল ইসলাম চিশতীর বাৎসরিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন

ফকির নুরুল ইসলাম চিশতীর বাৎসরিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন
মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ;
“মান আরাফা নাফছাহু,ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু”
(অর্থঃ-নিজেকে নিজে চিন)
মরমী ধ্যান ধারণায় গুরু ভাব গাম্ভীর্যে সিলসিলায় আত্ম নিয়োগ করে কামেল পীরের(আপন মুর্শেদের) দেখানো পথে নিজেকে উপযুক্ত রুপে আবিষ্কার সম্ভব
এমনটি মতপ্রকাশ ফকির সাধুদের।
শীতের প্রকান্ড চাপে প্রকৃতির বুকে জীর্ণতার সাথে বসবাসরত বৃক্ষরাজি, তরু-লতা আপন মোহিনী সাজে নববধুর লাজুকময়ী চেহেরা করে প্রকাশিত হয় নতুন দিগন্ত এই বসন্ত কালে।চতুষ্পার্শ্বে সৌন্দর্যের ঘনঘটা, ফুটে নানান ফুল ভূবনময়ী বিকশিত ভাব নিয়ে, এ সময় ফুটে  নাগেশ্বর, পলকজুঁই ,  রুদ্রপলাশ, শাল, শিমুল, স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি। আর নৈসর্গিক বিনোদনে মাতুয়ারা চারপাশ, মানুষের মাঝে শুরু হয় নববর্ষ কে ঘিরে প্রস্তুতি। অন্যদিকে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা সাধু বা সূফিদের বাৎসরিক ওরস মাহফিল।প্রতি আরবী মাসের এগারো শরিফে মাসিক ওরস মাহফিল হয় ফকির নুরল ইসলাম শাহ (চিশতী)এর বাড়ীতে।আবার বৎসরে একবার বার্ষিক ওরস হয় জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু এ বছর  তেমন বড় পরিসরে না হলেও ওরস হয়েছে চমৎকার দর্শনার্থীরা এমন সংজ্ঞা দিয়েছেন। প্রতি বছরের বাংলা ১৮ ই ফাল্গুন বাৎসরিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে জানা যায়,বৃহস্পতিবার (৩/২/২২) সন্ধা থেকে রাতের শেষ প্রহর অবধি চলে বাউল গান(তত্ত্বগান)কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সাহেবের চর গ্রামে।ফকির নুরুল ইসলাম শাহ চিশতীর বাড়ীতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রথমে পাকপাঞ্জাতনের নামে মোমবাতি  আগরবাতি প্রজ্জ্বলিত করে, দরুদ শরিফ ও দোয়া পাঠ করে অন্যন্য নৈবেদ্য শেষ করে শুরু হয় তত্ত্বগানের অনুষ্ঠান।  আধ্যাতিক গানের সুর ও বাজনার ধ্বনিতে মোখরিত হয় বাউল মন।
জানা যায় – উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতির দ্বায়িত্বে ছিলেন ফকির নুরুল ইসলাম শাহ( চিশতী) তিনি একই গ্রামের হাজীবাড়ী নামক মহল্লার কৃতি সন্তান।তিনি ঢাকা জেলার নবাব গঞ্জ থানার আগলা গ্রামের হযরত শাহ সূফি সামসউদ্দীন চিশতী( রঃ) এর কাছ থেকে শিষ্যত্ব গ্রহন করেন ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে।
হযরত শাহ সামসউদ্দীন চিশতী( রঃ) শিশ্যষত্ব গ্রহন করেন,তারই পিতা হয়রত শাহ সুফি এয়াকুব চান ফকির(রঃ) এর কাছে,তাহার পির ছিলেন তাহার পিতা  হযরত শাহ সূফি আবু চান চিশতী (রঃ)তিনার পির ছিলেন তিনার চাচা হযরত শাহ সূফি রতন ফকির চিশতী( রঃ)।
আরো জানা যায়- উক্ত গানের পর্বে কন্ঠ শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেন, ছন্দু সরকার, শাহ শফিকুল ইসলাম,  তোতা শাহ, নাসির রাজা, বোরহান উদ্দীন ।পাগল সূতি শাহ চিশতী
উক্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করেন,এলাকা ও প্রতিবেশী এলাকার শীর্ষ স্থানীয় ময়মুরুব্বি, কিশোর, যোবক, এবং সংস্কৃতিমনা সকল শ্রেনী পেশার মানুষ মহিলাসহ।অসংখ্য মানুষের মিলনায়োতনে এক মধুময় লগ্নের সৃষ্টি হয়।অবশেষে সিন্নি (তবারক)খাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।হাজার মানুষের প্রানে অনবদ্য অনুভূতির সৃষ্টি করে এসব ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান।
শিল্পী নাসির রাজার সাথে কথা হলে জানান,আমার ওস্তাদ মাহফুজ রাজার লেখা একটা গানে লিখেছেন –
“ধররে মন সাধুর সঙ্গ,
জাগাও মধুর প্রেম তরঙ্গ,
পঞ্চরসের রসিক হও,
শব্দ,স্পর্শ, রুপ,রস,গন্ধ তত্ত্ব  জেনে লও”
আরো জানান,ফকিরির অনেক তত্ত্ব বিধান রয়েছে  পাপ পূন্যের হিসেব যতটুকু সম্ভব মেনে চলতে চেষ্টা করি।প্রতি বছরের ন্যায় এবারো এ জলসায় ভালো গান হয়েছে।
স্থানীয় গোলাপ শাহ বলেন,ফকির নুরুল ইসলাম শাহ চিশতী আমাদের বংশের মুরুব্বি অত্যন্ত মান্য ব্যক্তি।
ওনি আমার পির ভাই অসংখ্য গুনের অধিকারী তিনি।
উক্ত ওয়ার্ডের মেম্বার  কামরুজ্জামান কাঞ্চন জানান,
নুরুল ইসলাম শাহ একজন ভালো মানুষ, অত্যন্ত গুণিজন আমরা বহুকাল থেকে দেখে আসছি উনি প্রতি বছরের ফাল্গুনের আঠারো তারিখ অনুষ্ঠানটা করেন।ভক্তদের মিলন মেলা হয়।উত্তরোত্তর উনার সার্বিক সম্বৃদ্ধি কামনা করি।
সিদলা ইউনিয়নের সাবেক সফল চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন (এম এ) বলেন,নুরুল ইসলাম শাহ শ্রদ্ধা ভাজন আমার খুব প্রিয় মানুষ। উনার অসংখ্য ভক্তবৃন্দ ও শিষ্য রয়েছে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের মঙ্গলময় জীবন কামনা করি।

আপনি আরও পড়তে পারেন