দোহারের মৈনটঘাটে ফসলি জমি নষ্ট করে বালু ব্যবসার মহোৎসব

দোহারের মৈনটঘাটে ফসলি জমি নষ্ট করে বালু ব্যবসার মহোৎসব
সাইফুল ইসলাম,(দোহার-নবাবগঞ্জ)
ঢাকার দোহারের মৈনটঘাটে ফসলি জমি নষ্ট করে চলছে বালু ব্যবসা। এতে দিন দিন মৈনটঘাট এলাকায় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এক সময় মৈনটঘাটে প্রচুর বাদাম, সরিষা, ধনিয়া ও গম সহ অনেক ধরনের সবজি ও ফসল উৎপাদন হতো। কিন্তু বালু স্তুপের পর থেকে এখানে ফসল  ফসল উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছে ও সবজি উৎপাদন করা সম্ভবই হচ্ছে না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৈনটঘাটে ফসলি জমির বিশাল এলাকা জুড়ে বালুর স্তপ করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। এবং বাতাসে বালু গিয়ে পাশে থাকা ফসলি জমি গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে  প্রচুর।
স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন জানান, এই বালুতে দিন দিন ফসল উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পরছে। আগে এই মৈনটে প্রচুর পরিমানে ধান, বাদাম, কলই, গম, সরিষা সহ বিভিন্ন ধরনের সবজিও ফলানো হতো। কিন্তু এখন সারা মৈনট এলাকা ঘুরেও এসব ফসলের দেখা পাওয়া যায় না। এর কারন এই বালু ব্যবসা।
আরো কয়েকজন কৃষক জানান, এখানে সব প্রভাবশালীরাই বালু ব্যবসা করে। তাদের কিছু বলা যায় না। আর এই বালুতে কোন জিনিসই আমরা করতে পারছি না। সব জমি আস্তে আস্তে বালু ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সবুজ নামে এক পথচারী জানান, প্রথম প্রথম আমরা সময় পেলেই মৈনটঘাটে আসতাম সময় কাটাতে। তখন মৈনটঘাটের পরিবেশ ছিলো সবুজ ফসলের মাঠে ঘেরা। আর এখন প্রয়োজনেও আসতে ইচ্ছে করে না। এখানে আসলেই ট্রাকের বালুতে গোসল হয়ে যায়। সারাদিন শরীর চুলকায়।
আর এসব বালু পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রদানব ট্রাক। উপজেলার প্রতিটি সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া অবৈধ মাটির ট্রাকগুলো। এসব ট্রাকের নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র, রয়েছে বেপরোয়া গতি, হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো এবং বেশির ভাগ চালকদের নেই  ড্রাইভিং লাইসেন্স। সব মিলিয়ে নিয়ম কানুন ছাড়াই দিনরাত সড়কগুলো দখলে নিয়েছে মাটি ব্যবসায়ীদের এই যন্ত্রদানব। বিশেষ করে স্কুল চলাকালীন সময়ে ট্রাকের বেপরোয়া গতি জনমনে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এযাবৎকাল উপজেলার বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে  ট্রাক চাপাায়। তারপরও লাগাম টানা যাচ্ছে না প্রাণঘাতি এ বাহনটির।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়,  রাজনৈতিক পরিচয়ে বেশ কয়েকজন মিলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে এই বালু ব্যবসা করছে। তাদের বিরুদ্ধে নাকি ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারে না।
বালুর ট্রাকে ফসলি জমির পাশাপাশি ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট। এছাড়াও মৈনটঘাট ইতিমধ্যে মিনিকক্সবাজার নামে দেশের সর্বত্র খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে এখানে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এই বালুর কারনে এখানে পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হয়ে পরছে। সেই সাথে যারা প্রতিনিয়ত এই পথে চলাচল করে তারা এই বালুতে অতিষ্ঠ হয়ে পরছে।
বেপরোয়া এই বালু ব্যবসা ও ট্রাকের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এক সময় এই মৈনটঘাট পর্যটক শূন্যের পাশাপাশি ফসলের মাঠের পরিবর্তে মরুভূমির মতো হয়ে পরবে।
এবিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি, সেখানে খুব দ্রুত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবো।

আপনি আরও পড়তে পারেন