বন্ধ ট্রেন চালুর দাবি সান্তাহারবাসীর

বন্ধ ট্রেন  চালুর দাবি সান্তাহারবাসীর; দূর্ভোগ কমবে অনেকটাই

৭ আপ ও ৮ ডাউন ট্রেন চালুর দাবি; কমবে দূর্ভোগ ও বাড়তি চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বগুড়ার সান্তাহার জংশন স্টেশন থেকে হঠাৎ করে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেইল ও একটি লোকাল ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। ট্রেন দুটি চলতো সান্তাহার-লালমনিরহাট এবং সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটে। যেখানে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, হকারসহ হাজার হাজার যাত্রী তাদের দৈনন্দিন কাজ কর্মের জন্য যাতায়াত করতো। কিন্তু গত প্রায় ৬ বছর পূর্বে ১টি ও ২ বছর পূর্বে আরও ১টি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ওই সকল রুটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণেরা। একদিকে যেমন অন্য ট্রেনে বাড়তি চাপ বেড়েছে অন্যদিকে বিকল্প হিসেবে চলাচল করতে গিয়ে বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে নিন্ম আয়ের যাত্রীদের। তাই অন্য ট্রেনে বাড়তি চাপ কমাতে এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ট্রেন দু’টি আবারও চালু করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

রেলওয়ে সূত্রমতে,  ‘পদ্মরাগ কমিউটার’ (২১ আপ ও ২২ ডাউন), ‘বগুড়া কমিউটার’ (১৯ আপ ও ২০ ডাউন), এবং ‘লোকাল’ (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) নামে ৩ জোড়া ট্রেন সান্তাহার জংশন থেকে লালমনিরহাট রুটে চলাচল করতো। অন্য দুই জোড়া ট্রেনের মধ্যে ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ (৭ আপ ও ৮ ডাউন) সান্তাহার-পঞ্চগড় (নতুন নামকরণ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন) এবং ‘কলেজ ট্রেন’ নামে পরিচিত লোকাল (৪৯১ আপ ও ৪৯২ ডাউন) ট্রেন সান্তাহার বোনারপাড়া রুটে চলাচল করতো।

তবে প্রায় ৬ বছর আগে ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই সান্তাহার-লালমনিরহাটগামী ‘লোকাল’ ট্রেনটি (৪৮১ আপ ও ৪৮২ ডাউন) বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার ৪ বছর পর ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবাকি হলেও ‘কলেজ ট্রেন’ নামে সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটে ট্রেনটি আর চালু হয়নি। ট্রেন দু’টি ১০টি করে বগি নিয়ে চলাচল করতো। প্রতিটি বগিতে ৭০জন করে বসার ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। ফলে ট্রেন দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।

জানা যায়, বিভিন্ন সময় বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা এই ট্রেন দুটি লীজ নিয়ে পরিচালনা করতো। তারা ট্রেনের টিকেট বিক্রি ও টিকেট চেকিং এর ব্যবস্থা করতো। সময় উত্তীর্ণ হলে লীজ বাতিল হয়ে গেলে আবার বাংলাদেশ রেলওয়ের বাণিজ্যিক ব্যবস্থানায় টিকেট বিক্রি, চেকিং ও কালেকশন করা হতো। কিন্তু করোনা কালে লকডাউনের সময় গত ৫ এপ্রিল থেকে ১৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর সব ধরনের ট্রেন চালু হলেও ৭ আপ ও ৮ ডাউন ট্রেন এখনো চালু হয়নি।

বগুড়া জেলা শহরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সান্তাহারের মাখলুক হোসেন। প্রতিদিন তাকে সান্তাহার থেকে বগুড়া গিয়ে অফিস করতে হয়। সান্তাহার থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে বগুড়া যেতে বাসে ভাড়া গুণতে হয় ৭০ টাকা। আর ট্রেনের ভাড়া মেইলে ২০ টাকা এবং লোকালে মাত্র ১৫ টাকা। তিনি বলেন, ট্রেন যাত্রা নিরাপদ এবং খরচও অনেক কম।
সে কারণে আমি সব সময় ট্রেনেই কর্মস্থলে যাতায়াত করতাম। তিনি বলেন, এছাড়া শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলায় ধান কাটার জন্য ট্রেনযোগে শ্রমিক চলাচল করে ।

সান্তাহার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আম্বিয়া লুলু বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের যাতায়াতের স্বার্থে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত লোকাল ও মেইল ট্রেন আরও বাড়ানো। কিন্তু তা না করে উল্টো তারা বন্ধ করে রেখেছে। তিনি বলেন, রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তাঁর আমলে লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক। আশাকরি বন্ধ থাকা দু’টি ট্রেনের পাশাপাশি আরও একাধিক মেইল ও লোকাল ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ট্রেন দু’টির চলাচল বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে সান্তাহার জংশন স্টেশন  মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম জানান, যতদূর জেনেছি জনবল বিশেষত চালক সংকটের কারণে ট্রেন দু’টির চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে গত ২৩ এপ্রিল রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন  বগুড়া সফরকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, বন্ধ থাকা ট্রেন দু’টি অচিরেই চালু করা হবে। ‘কোন ট্রেন আর বন্ধ থাকবে না। সবগুলোই চালু করা হবে।’

 

আপনি আরও পড়তে পারেন