সরকারবিরোধী ঐক্য, কীভাবে এগোবে বিএনপি

সরকারবিরোধী ঐক্য, কীভাবে এগোবে বিএনপি

বিদ্যমান দুই মিত্র জোটের শরিকদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য করার প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে প্রথমে মিত্র জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্য এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির একাংশের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। এখন জোটের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপে বসছে তারা। আর সবগুলোর দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে যেসব প্রস্তাব আসবে, সেইগুলোর সমন্বয় তৈরি হবে জোটের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো।

তবে, সংলাপ শেষে সবগুলো রাজনৈতিক দল ঐক্যমতে পৌঁছালে, নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে সব দলের একজন করে প্রতিনিধি থাকবে, আর সমন্বয়ক হবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু আগেই অনানুষ্ঠানিকভাব কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যর সঙ্গে বিএনপির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যর মিল থাকায় এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করেছে। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিএনপির পক্ষে থেকে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। সেগুলো হলো— কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় সরকারবিরোধী যুগপথ আন্দোলন সফল করা যায়, কী ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন শুরু হবে সেটাই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর তাদের পক্ষ থেকে কী ধরনের চাওয়া-পাওয়ার প্রস্তাব আসে সেগুলো জানা। যেগুলো পরবর্তীতে দলের শীর্ষ পর্যায়ে কাছে তুলে ধরা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির চলমান সংলাপে অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে একটি বিষয় পরিষ্কার ধারণা পাওয়া চেষ্ঠা করা হবে, সেটি হচ্ছে জামায়াতকে নিয়ে কোন দলের মনোভাব কী। যেটি জানা বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিএনপির বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের বারবার জামায়াত ইস্যুটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, কূটনৈকিভাবেও নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে এই ইস্যুতে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে শেষে জামায়াতকে নিয়ে তাদের যে মনোভাব পাওয়া যাবে, সেটি যখন জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ করা হবে তখন তুলে ধরা হবে। এরপর সেটি বিএনপির শীর্ষ নেতার কাছে তুলে ধরা হবে। তারপর জামায়াতকে নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারবে। তখন চাইলেও জামায়াতের ইস্যুটি ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য মিলে যাওয়ায় আমরা এখন সংলাপ শুরু করছি। আর সংলাপের মধ্যে দিয়ে পরবর্তী সময়ে কীভাবে এই রাজনৈতিক ঐক্য এগিয়ে নেওয়া যায়, তা ঠিক হবে।

তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপি যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিক করতে না পারবে এবং লক্ষ্য স্থির করতে না পারবে, ততক্ষণ নতুন কোনো ঐক্য তৈরি হবে না। আগে বিএনপিকে নিজেদের লক্ষ্য কী সেটা পরিস্কার ভাষায় ঐক্যে আগ্রহী দলগুলো কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে নতুন ঐক্য সৃষ্টি হবে। লক্ষ্যও পূরণ হওয়া সম্ভব হবে।

চলমান সংলাপে অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক করার সিদ্ধান্ত কতটুকু ইতিবাচক ফল আনবে জানতে চাইলে এই নেতা আরও বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে সেটাও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সুতারাং তাদের ছাড়তে হলেও তো আলোচনা করতে হবে। যেহেতু আলোচনা শুরু হয়েছে, আশা করি জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি একটা পজিটিভ সিদ্ধান্তে আসতে পারবে।

বিএনপির বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত হতে যাওয়া দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দুই নেতা বলছেন— বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপে প্রথমে তারা কী বলতে চায় সেইগুলো শুনবো। তারপর আমরা কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী, সেই বিষয়ে পরিস্কার জানতে চাইবো। এরমধ্যে প্রথমে আসবে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তাদের কী ভাবনা, নির্বাচনকালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে তাদের পরিকল্পনা কি, নির্বাচন পরবর্তী সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিএনপির চিন্তা কী, শাসন ব্যবস্থায় তারা কী ধরনের গুণগত পরিবর্তন আনতে চায়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধে তাদের কী অঙ্গীকার থাকবে এবং ক্ষমতায় গেলে কোন প্রক্রিয়ায় তারা সরকার গঠন করবে— এসব বিষয়ে বিএনপির কাছ থেকে পরিস্কার বক্তব্য জানতে চাইবো আমরা। শুধুমাত্র ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া তো আমাদের মূল লক্ষ্য নয়।

বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি সাইফুল হক দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, আমাদের সঙ্গে ১ জুন বিএনপির বৈঠক আছে। সেখানে তারা কী বলতে চায়, সেগুলো শুনবো। তারপর আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে কিছু বিষয় তো জানতে চাইবো।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় তারা গুণগত কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়, সেটা জানতে চাইবো। দেশে যেসব কালাকানুন রয়েছে, সেইগুলো নিয়ে তাদের কী মনোভাব, সংবিধান সংশোধন নিয়ে কী মনোভাব তা জানতে চাইবো। এছাড়া বর্তমানে দেশের নির্বাহী বিভাগ যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা তো আধুনিক গণন্ত্রের জন্য ভালো না। সেই বিষয়ে বিএনপির কী চিন্তা তা নিয়েও আলোচনা হবে নিশ্চয়।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্ন দৈনিক আগামীর সময়কে বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে, সেখানে তাদের পক্ষ থেকে সুনিদিষ্ট কোনো প্রস্তাব ছিল না। তারা বৃহত্তম ঐক্যের অংশ হিসেবে বৈঠক করেছে, আবারও বৈঠক হতে পারে। তারপর বোঝা যাবে কীভাবে তারা এগাতে চায়।

তিনি আরও বলেন, গত বৈঠকে বিএনপি তাদের কিছু বিষয় আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছে। আমরাও কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আগামীতে যখন আবার বৈঠক হবে, তখন বৃহত্তর ঐক্য হলে কীভাবে তা এগোবে এবং কার্যক্রর করা হবে, সেগুলো উঠে আসবে।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপে শেষে সবগুলোর দলের প্রতিনিধি নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে সব দলের একজন করে প্রতিনিধ থাকবে। তবে, এর সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে, নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকারের রূপরেখা এবং প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এ বিষয়গুলো আরও পরে চূড়ান্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে বামপন্থী একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন হলেও সেখানে শুধুমাত্র তাদের লোকই সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে বা এক ব্যক্তিকে সমন্বয়ক করা হবে, সেটা হবে না। এখানে গণতান্ত্রিক নীতিমালা চাইবো আমরা। কারণ এখানে সবগুলো দল আলাদা-আলাদা।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন