ঈদকে সামনে রেখে সরগরম রূপগঞ্জের কামারপল্লী

ঈদকে সামনে রেখে সরগরম রূপগঞ্জের কামারপল্লী

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ কেউ লোহা গরম করছে। কেউ ঠাস ঠাস পেটাচ্ছে। কেউ পানি মারছে। কেউবা আবার ধূপিতে ( হাওয়ার ফুলকি ) আগুন দিচ্ছে। হাপর টানছে কেউ কেউ। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। শুধু নিজের গ্রাম নয়, দূরের গ্রাম থেকেও অনেকে এসেছে দা, বটি, ছুরি , চাপাতি বানাতে। এ হল বর্তমান কামারপল্লীর চিত্র।
কথা হয় দেইলপাড়া এলাকার রঞ্জিত চন্দ্র কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন চিত্র সারা বছর থাকে না। শুধু মাত্র কোরবানী এলেই আমাগো কদর  বাড়ে। দু’টা ডাল ভাতর ব্যবস্থা হয়। দাদা বছরের একবার রাইত ভইরা কাম করলে কি অইবো। হারা ( সারা ) মাসতো বইয়া বইয়া খাইতে হয়।
রামজয় কর্মকার বলেন, আগের দিনো লোহার জিনিসের কদর আছিলো। অহন ষ্টীলের জিনিসের কদর বাড়ছে। হের লেইগ্যা আমাগো লোহার ব্যবসায় জং ধরছে। যতীন্দ্র চন্দ্র, নরীন্দ্র চন্দ্র, সুজা চন্দ্র বলেন, ঈদের ১০-১২ দিন আগে থেকে দা, বটি বানানোর ধুম পড়ে গেছে। দশ গায়ের লোক এখানে আসে দা, বটি, ছুরি বানাতে।
চাঁদ ওঠে গেছে। সামনে কোরবানীর ঈদ। সবাই কোরবানীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। খামারিরা পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত। হ্টাগুলো প্রচার পচারনায় ব্যস্ত। পশু কেনার প্রস্ততি নিচ্ছেন মানুষ। নিরব কামার পল্লীতে টুং টাং শব্দে মুখর। যেন ব্যস্ত সবাই। বাদ যায়নি ভ্রাম্যমান কামার শিল্পিরাও। তারাও যন্ত্র কাদে নিয়ে পাড়া মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। কারো হাতে কোনো সময় নেই। সবাই কোরবানীর প্রস্তুতি নিতেই ব্যস্ত।
কোরবানী করতে দা, চাকু, বটি, কোবা, চাপাটির প্রয়োজন হয়। আর এগুলো সবাই তৈরি করতে পারে না। কসাই ছাড়া অন্যদের সব সময় এগুলো কাজেও লাগে না। তাই দা, বটি, চাকু, ছুরি তৈরি করতে অথবা যাদের এগুলো পুরাতন হয়ে গেছে বা জং পড়ে গেছে তারা সবাই এখন ছুটছেন কামার পল্লীতে। কামাররাও অধিক মূল্য হাঁকছেন এগুলো করতে। অনেকে আবার সান দেয়ার যন্ত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন কোরবানী করার যন্ত্রপাতি ধারালো করার জন্য। হাটে বাজারে কোরবানীর সামগ্রির প্রসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা।
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রূপগঞ্জের কামার পল্লীগুলো এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছর ধীরে সুস্তে কাজ করলেও এখন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। দিন রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও কামার পল্লীগুলো। সরজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় পেশাদার কামার শিল্পীরা কায়েতপাড়া বাজার, মুড়াপাড়া বাজার, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, ইছাপুরা, বাগবের বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে দা, বঁটি, চাকু, ছোরা, কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন।
এসব জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়িদের সরবরাহ করছেন তারা। বিভিন্ন বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে ধারালো এসব যন্ত্র তৈরি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন কামার শিল্পীরা। কয়েকদিন বাদেই কোরবানির ঈদ। প্রতিবছর ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসলেই কামারদের কদর বাড়ে। এসময় দা, বটি, ছুরি, চাপাতি তৈরির ধুম পড়ে। এবারও কামারদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কাজের চাপে কারিগরেরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলে তাদের কদর বাড়ে। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের দেইলপাড়া, উত্তরপাড়া, নয়ামাটি, নিমেরটেক, ভুলতা, আতলাপুর ও কাঞ্চন  এলাকার কামারপল্লীতে পাচ শতাধিক কামার কারিগর রয়েছে। তারা বংশ পরস্পরায় এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। দুঃসময় হলেও বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এটি তারা আঁকড়ে ধরে আছে। আগে সারা বছরই লোহার কাজকর্ম চলত। কিন্তু কারখানার তৈরি ইস্পাতের ( স্টীল ) দা, বটি, ছরি বাজার দখল করার কারণে এখন অনেকেই লোহার তৈরি জিনিসের দিকে ঝুঁকছে না। তাই বছরের ১১ মাসই কারিগরদের অলস সময় কাটাতে হয়। প্রতিবছর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ এলে কামারদের ধুম পড়ে।
ভালোই হচ্ছে।
উপজেলা কর্মকার সমিতির সভাপতি কালিপদ রায় বলেন, এ উপজেলায় ৪০০ থেকে ৫০০ কর্মকার রয়েছে। আগে দুই হাজারের উপড়ে কর্মকার আছিলো। এহন ব্যবসা লাটে ওঠায় অনেকে ব্যবসা ছাইড়া গেছেগা। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে তিনটি কামার পল্লী রয়েছে। আমি সবসময় চেষ্টা করি তাদের পাশে দাড়াতে। তারা অনেক কষ্টে এ পেশায় টিকে রয়েছে। সরকারী সহযোগিতা পেলে হয়তো আরো ভাল করতো। ফিরে আসতো এ পেশার জৌলুস।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন