পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় বিএনপি

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় বিএনপি

শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া সংক্রান্ত যে বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ব্যাখ্যা চান। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) চট্টগ্রামে জে এম সেন হল মাঠে জন্মাষ্টমী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এ কথাটার (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) ব্যাখ্যা চাই। আমরা জানতে চাই এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও যে, আজকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেই কথার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায় এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে? এ কথার অর্থ মানুষ তো জানতেই চাইবে। এটি জরুরি কথা।’

তিনি বলেন, ‘গত পরশুদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুংকার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথা-বার্তা বলেছেন। এতই যদি আপনারা হুমকি দেন, ধামকি দেন তাহলে আবার আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য দাবি করেন কেন?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে সমৃদ্ধ দেশ তৈরি করবে কি করবে না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে এই প্রশ্নগুলো কেন এসেছে। কারণ, আমরা দেখলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, সংবিধানকে পরিবর্তন করেছে, মানুষের যে পাঁচ বছর পরপর একদিন ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবার যে সুযোগ ছিল, সেই ভোট দেওয়ার ক্ষমতাকে হরণ করে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে তারা বাতিল করে দিয়েছে।’

বাংলাদেশে গুমের ঘটনাসমূহের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলের দেওয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে পরিষ্কার করে বলেছেন, এখানে র‌্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সমস্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এটির বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন, তার খবর পাওয়া যায়নি। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্র নেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে। আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিশ্চয় ওই নেত্র নিউজ আপনারা সকলে দেখেছেন, আয়নাঘর দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই আয়নাঘর কতটুকু সত্যি, কিবা আছে তা বলতে হবে। জনগণ জানতে চায়।’

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এত চ্যালেঞ্জ করবেন না। ক্ষমতা ছাড়ুন, ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে এদেশে জনগণের শক্তি বেশি না আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজদের শক্তি বেশি। অবশ্যই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন তখন বোঝা যাবে আপনার শক্তি কত? এ দেশে কয়টা লোক আপনার পক্ষে আছে তখনই বোঝা যাবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না, আমরা আওয়ামী লীগকে আর কোনো সময় দিতে রাজি নই, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া হবে না। এখন জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে একই সঙ্গে রাস্তায় রাজপথ দখল করে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, এস এম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিনসহ অন্যরা।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন