বেড়েছে লোডশেডিং, ফিরে এসেছে হারানো কুপি, হারিকেন, মোমবাতি। বেড়েছে হাতপাখার চাহিদা

বেড়েছে লোডশেডিং, ফিরে এসেছে হারানো কুপি, হারিকেন, মোমবাতি। বেড়েছে হাতপাখার চাহিদা

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ বেড়েছে লোডশেডিং, ফিরে এসেছে হারানো কুপি, হারিকেন, মোমবাতি। বেড়েছে হাতপাখার চাহিদা।
“আর ভাল্লাগে না লোডশেডিংয়ের জ¦ালা। একে তো আগুন গরম তারওপর ঘন্টার পর ঘন্টা লোড শেডিং। এমন তো কথা আছিল না। প্রধানমন্ত্রী কইছে সারাদিনে ১ থেকে ২ ঘন্টা এলাকাবেধে লোডশেডিং দিবে। এখন তো দেহি ঠিক উল্টা। দৈনিক ৭/৮ ঘন্টা লোডশেডিং দিতাছে। এভাবে চলতে থাকলে মরে যামু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাগো রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া বাসীদের একটু বাঁচান।” গরমে হাসপাস করে এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন কায়েতপাড়ার মোতলেব মিয়া।
ইছাখালী এলাকার রাসে মিয়া বলেন, এভাবে লোডশেডিং দিতে থাকলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হযে যাবে। তখন ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে ভিক্ষা করে খেতে হবে। ছালাম মিয়া বলেন, ১ ঘন্টা পর পরই বিদ্যুৎ চলে যায়। এটা কোনো সভ্যতা হল। স্কুল শির্ক্ষাথী রাজন বলেন, দিনে রাতে কোন সময়ই কারেন্ট থাকে না। লেখা পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আবিদ হাসান বলেন, পরীক্ষা চলতেছে। লেখাপড়া ঠিকমত করতে পারি না। জানি না পরীক্ষায় পাস করতে পারমু কি না। ফেল করলে বাবায় লেখা পড়া বন্ধ কওে দিব কইছে।
গৃহিনী নাজনীন সুলতানা বলেন, বেশকিছু দিন ধরে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। প্রকৃতিতে যেন গ্রীষ্মের তাপদাহ চলছে। তাপদাহে নাকাল এলাকার জনজীবন। তবে আমাদের দেশে লোডশেডিং একটি নিত্যঘটনা। আমরা জানি যে, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের সরবরাহ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখাকে লোডশেডিং বলে। এই ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষজন।
শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ একবার গেলে আর আসে না। গ্রাম-জনপদ সর্বত্রই হঠাৎ এ বিদ্যুৎ সংকট। এ গরমে টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে আর এতেই শুরু হয়ে গেছে অসহনীয় লোডশেডিং। নেই কোনো শিডিউল। ইচ্ছেমতো বিদ্যুৎ নিচ্ছে আর দিচ্ছে। গ্রামে সন্ধ্যা নেমে এলেই লোডশেডিং-এর ধুম পরে যেতো; কিন্তু বর্তমানে দিনরাত মিলে ৭/৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
ছালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়েও বিল কমে না। বরং আরো বাড়ে। আগে যেখানে বিল আসত ৫/৬ টাকা এখন ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা। তারওপর বিল দেয়ার পরও বকেয়া বিল কওে পাঠায়। এ টাকা যায় কোথায়, খায় কে? আগে তো এমন আছিল না। বর্তমান ডিজিএম আসার পরই এমন দুর্নীতি আরম্ভ হইছে। আমরা তার দ্রুত অপসারণ চাই।
এতে করে লেখাপড়াসহ মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের ?অভাবে ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না। এছাড়াও কৃষকরা মাঠে তাদের জমিতে পরিমিত পরিমাণে সেচ দিতে পারছে না। ফলে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়। বাসায় বয়স্ক লোক এবং বাচ্চাদেরও অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। বলতে গেলে সর্বস্তরের মানুষই লোডশেডিংয়ের দুঃসহ-যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে।
একদিকে এতো গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন অন্যদিকে এমন লোডশেডিং বিড়ম্বনা। দিনের বেলা লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু রাতের বেলা এ লোডশেডিং কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ নিমিষেই অসুস্থ হয়ে পরবে। আর এবারের লোডশেডিং যেন অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি তাপমাত্রা কম থাকলে অর্থাৎ বিদ্যুতের চাহিদা কম হলেও গ্রাহক দিন-রাতের লোডশেডিং বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এমন দুর্ভোগ থেকে রূপগঞ্জবাসী মুক্তি চায়।
প্রচ- গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। সেই সঙ্গে ঘনঘন লোডশেডিং মানুষের ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গরম থেকে বাঁচতে বেড়ে গেছে হাতপাখার কদর। তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে লোকজন স্থানীয় বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করাসহ বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। কলকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস জানায়, চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন তাঁরা। চলতি মাসজুড়েই এ অবস্থা বিরাজ করেছে।  জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কখনো কখনো একসঙ্গে দু-তিনটি ফিডার লোডশেডিংয়ের আওতায় রাখতে হচ্ছে। কখনো ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাটারিচালিত ফ্যান ও চার্জার লাইটের দোকানে। নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন উপজেলার ইলেকট্রিক দোকানগুলোতে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা পড়েছেন বিপাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে চার্জ করতে না পাড়ায় দৈনন্দিন আয় নিয়ে বিপাকে আছেন অনেকে।

কারখানার মালিক মনিরুজ্জামান বলেন, বিদ্যুতের ওঠা-নামায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতিও হুমকির মুখে পড়েছে। চাহিদা মোতাবেক সময়মতো গ্রাহকদের সরবরাহ করতে না পারায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ তিনি জানান, বিদ্যুতের এই ঘাটতিতে তিনি ভীষণ সমস্যায় আছেন।
শিল্পপতি মামুন মিয়া বলেন, উপজেলার বড় ও মাঝারি মিলে রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক কারখানা। এসব কারখানায় উৎপাদনও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার বহু ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কারখানার উৎপাদনও কমে গেছে।
সাংবাদিক জায়েদ হোসেন বলেন, আর সাংবাদিকতা করা লাগবে না। লোডশেডিংয়ের কারণে সময়মত নিউজ পাঠানো যায় না। চাকরি থাকবে কি করে?
উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাজমুল আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের অভাবে রোগীদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। এ হাসপাতালে থাকা জেনারেটরে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  অসময়ে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে পড়তে হয়েছে তাঁদের। এমনকি মধ্যরাত বা শেষরাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। ভাদ্রের এ গরম আবহাওয়ার সঙ্গে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন।
গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, দিনে-রাতে একটু পরপর বিদ্যুৎ যাচ্ছে। যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলেও বিদ্যুৎ আসার নিশ্চয়তা নেই। গরমে বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজিতে ছেলেমেয়ে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নগরপাড়া বাজারের কম্পিউটার্সের মালিক শাহিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় কাজকর্ম বাদ দিয়ে বসে বসে সময় কাটাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওই কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) লাবিবুল বাশার বলেন, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ার অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সারা দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপমাত্রার পাশাপাশি এসব এলাকায় আর্দ্রতা বেশি ছিল। ফলে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাহিদার অর্ধেক, কখনো তারও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের তথ্যও আগাম জানানো সম্ভব হচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে মানুষকে অর্ধেক রাত নির্ভর করতে হয় হাতপাখার ওপর। সন্ধ্যার পর পুরো এলাকায় ভুতুড়ে অন্ধকার নেমে আসে। বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যেও ক্ষতি হচ্ছে। লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
রোদ ও ভ্যাপসা গরম আর সঙ্গে মারাতœক লোডশেডিংয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের অভাবে কোনো কোনো গ্রাহক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জনগণের ভোগান্তি কমাতে সরকার এলাকাভিত্তিক ১ ঘন্টা করে লোডশেডিংয়ের উদ্যোগ নিলেও তবে এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ থেকে পরিত্রান চায় রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়বাসী।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন