বারহাট্টায় নবান্নের আমেজ কৃষকের ঘরে

বারহাট্টায় নবান্নের আমেজ কৃষকের ঘরে

রিপন কান্তি গুণ, বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি;

চলছে অগ্রহায়ণ মাস, বাঙালির প্রাণের উৎসব নবান্ন এলো সারা বাংলা জুড়ে অগ্রহায়ণের রথে চড়ে বাঙালির ঘরে। এ উৎসব থেকে পিছিয়ে নেই নেত্রকোনার বারহাট্টা এলাকার কৃষকরা।

প্রধানত অগ্রহায়ণের প্রথম দিন থেকেই ফসল কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন উৎসব নবান্ন। নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দের ছোঁয়ায় নবান্নের শুরু।

এবার এমন এক সময়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে যখন গোটা বিশ্বে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। তবুও কৃষক-কৃষানীর চোখেমুখে নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দের ছাপ। প্রতি বছরেই কৃষি প্রধান বাংলায় এ নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বহুকাল আগে কার্তিক মাসে কৃষকের গোলা শূন্য হয়ে যেত। অভাব দেখা দিত খাবারের। তাই কৃষকরা কার্তিক মাসকে মরা কার্তিক বলে আখ্যায়িত করতো। সবাই তখন তাকিয়ে থাকত অগ্রহায়ণের দিকে। তবে যতদিন গেছে ততই বদলে গেছে হিসাব-নিকাশ। বর্তমানে কার্তিক আর আগের মতো নেই। এ মাসেও পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ধান। বস্তুত শস্যের বহুমুখীকরণের ফলে এখন মোটামুটি সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন কৃষক। বিভিন্ন ফসল ফলান তারা।

বর্তমানের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, এখন কার্তিক মাসেই হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে আগাম জাতের আমন ধানের শীষ। পাকা ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। মূলত এখন কার্তিক মাস থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে আগাম আমন ধান কাটার উৎসব। নেত্রকোনার কৃষকরাও পিছিয়ে নেই আগাম আমন ধান কাটার উৎসবে।

বারহাট্টা উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে কৃষকরা বাড়তি লোক নিয়ে ফসলের মাঠে যাচ্ছেন। দিনভর চলছে ধান কাটা হচ্ছে। তারপর ধানের আটি কাঁধে বাড়ি ফিরছেন। বাড়িতে অপেক্ষমাণ কিষানী অপেক্ষায় থাকে ধান মাড়াইয়ের পর, শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে খুশি মনেই অংশ নিতে দেখা যায় তাদের। অগ্রহায়ণ মানেই আমন ধান কাটার মাস। ফলন ও উৎপাদনে বোরোর চেয়ে আমন পিছিয়ে থাকলেও প্রতি বছর এর উৎপাদন বাড়ছে।

নবান্ন উৎসব মানেই নতুন অন্ন। নতুন চালের রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবই নবান্ন উৎসব নামে পরিচিত। কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন সেগুলোর অন্যতম। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব শুরু হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১২ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে এবার। এ বছর উপজেলায় আগাম জাতের পাশাপাশি স্থানীয় জাতের আমন ধানের ফলনও বেশ ভাল হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান জানান, আমন মৌসুমে কম সময়ে অধিক ফলন হয় এমন জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পরামর্শে অনেক কৃষক পুরাতন জাতের পরিবর্তে আগাম ও স্বল্প মেয়াদী জাতের ধান আবাদে অগ্রসর হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে উপজেলায় আমনের নতুন জাতগুলোর প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এবার ফলনও বেশি হয়েছে। নবান্ন উৎসব তাই যথারীতি আনন্দঘন হবে। ফলন বাড়িয়ে আনন্দকে আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করা হবে বলেও প্রত্যাশা।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন