নেত্রকোনার মোড়ে মোড়ে জমে উঠেছে শীতকালীন পিঠার দোকান

নেত্রকোনার মোড়ে মোড়ে জমে উঠেছে শীতকালীন পিঠার দোকান

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

শীত আসলেই মনে হয়ে যায় শীতের নানা রকম মুখোরোচক পিঠার কথা। বর্তমানে শীতের জনপ্রিয় পিঠা ভাপা ও চিতই। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে হিমেল হাওয়ার প্রভাবে শহরের বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। শীতের শুরুতে গোধূলী বেলায় হালকা কুয়াশা নেমে আসতে না আসতেই নেত্রকোনা শহরের রাস্তার ধারে মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানানোর আয়োজন শুরু করে দেন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। থাকে অনেক ধরনের সরঞ্জাম, চালের আটা, গুড়, নারকেল আর ছোট্ট বাটি।

সন্ধ্যা নামার আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা।

সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে চিতই পিঠার দোকান। আর সেই পিঠার স্বাদ নিতে দোকানে ভিড় জমান সব শ্রেণির মানুষ। পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীও দোকানে পিঠা বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করতে পারছেন।

নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ধুম পরে যায় হরেক রকমের পিঠা বানানোর। ভোর বা সন্ধ্যায় নারীরা চুলার পাশে বসে দুধ-পুলি, তেলপুয়া, পাটিসাপটাসহ বিভিন্ন পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসলে তাদের পিঠাপুলি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নেত্রকোনা জেলার পৌর শহরের থানারমোড়, মুক্তারপাড়া মাঠ, বড়বাজার, সাতপাই কালিবাড়ি মোড়সহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারের মোড়ে এবং গ্রামের দোকানে মাটির চুলায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠা। বেশির ভাগই চোখে পড়ে ভাপা ও চিতই পিঠা। শীত আসলেই এসব দোকান বসে, তারা বাড়তি রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

সাধারণত ভাপা পিঠা ১৫ ও চিতই পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তার মধ্যে ভাপা পিঠা তৈরি করতে প্রয়োজন চালের গুঁড়া, নারিকেল কুরানো, খেজুর গুড়, লবণ, সামান্য পানি দিয়ে গোলাকার এ পিঠার জন্য ছোট ২টি বাটি, ২টুকরো পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে ফুটন্ত পানির ধুয়া ৩/৪ মিনিট দিয়ে তৈরি করা হয় ভাপা পিঠা।

অপরদিকে চালের গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে মাটির খোলায় তৈরি করা হয় চিতুই পিঠা। অতি সাধারণ এ পিঠাটি সরিষা বা ঝাল মসলা দিয়ে খেতে খুবই মজা। একটু সন্ধ্যা নামলেই ক্রেতারা ভিড় করছে এসব পিঠা তৈরির দোকানের সামনে। অনেকেই সেখানেই দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। আবার অনেকেই প্যাকেটে করে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

ভাপা পিঠা ভক্ত সুরঞ্জন সরকার বলেন, চালের গুঁড়ার সঙ্গে গুড় এবং নারিকেল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। গরম গরম ভাপা পিঠার মজাই আলাদা। ভাপা পিঠা আমাদের দেশের গ্রামীণ বাংলার দেশীয় সংস্কৃতি লালন করছে। অন্যদিকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেকারত্ব দূরীকরণ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

জেলার পৌর শহরের এক পিঠা বিক্রেতা জানান, বেচা-বিক্রি বেশ ভালোই। সন্ধ্যায় ক্রেতাদের আগমন ঘটে অনেক, ফলে চাহিদানুযায়ী বানানো হয়ে থাকে। গরমে তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও শীতের মৌসুমে তিনি ভাপা পিঠা ও সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিনযাপন করছেন।

আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিয়া জানান, পথেঘাটে অনেক পিঠার দোকান বসে। দোকানদার অবশ্যই দুহাত ধুয়ে পিঠা তৈরি করবেন। রাস্তার পাশের দোকান ঢেকে রাখা প্রয়োজন। অপরদিকে, ক্রেতারা হাত ধুয়ে পিঠা খাবেন। কখনোই বাসি ও পচা পিঠা খাওয়া উচিত নয়। এতে গ্যাস্ট্রিকসহ ডায়রিয়া হতে পারে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন