নেত্রকোনায় আমনের পর সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা

নেত্রকোনায় আমনের পর সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

আমন ধান কাটার পর নেত্রকোনার সর্বত্রই শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ। আগাম জাতের আমন ধান কাটার পর একই জমিতে মৌসুমি সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরাবর তারা আমন ধান কাটার পর একই জমিতে মৌসুমি সবজি চাষ করেন। যা দিয়ে তারা তাদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু এ বছর বাজারে সার, ডিজেলসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজি চাষ করে লাভবান না হওয়ার সম্ভাবনার আশঙ্কা করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলার বারহাট্টা, আটপাড়া, কেন্দুয়াসহ বেশকিছু উঁচু এলাকায় পুরোদমে চলছে রবিশস্য অর্থাৎ শীতকালীন সবজির চাষ। কোনো কোনো গ্রামের কৃষকরা ধানের পাশাপাশি বেগুন, মুলা, লালশাকসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করে বাজারে বিক্রিও করছেন।

এ বছর জেলার উঁচু এলাকাগুলোতে ধান আবাদের সেই জমিতেই কৃষকরা আবার চাষ করছেন এসব সবজি। নিজেরাও টাটকা সবজি খেতে পারছেন। অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করে বাড়ছে সংসারের আয়-উপার্জন।

ঠাকুরাকোনা এলাকার কৃষক শহীদ মিয়া বলেন, আমি গত বছর ৫ হাজার খরচ করে আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু এ বছর একই জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হচ্ছে ৮ হাজার টাকা, তারপরও আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে কিছুটা লাভের মুখ দেখা যাবে।

বারহাট্টা উপজেলার সরিষা চাষি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরিষা চাষে সারের পরিমাণ বেশি লাগে কিন্তু বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেশি হচ্ছে। সরিষা চাষ করে লাভবান হতে পারব কিনা এখনো বলতে পারছি না।

অন্যদিকে লাউ চাষি শামসুল হক বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ২০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছি, বর্তমান বাজারে প্রতি পিস লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করা যায়। সব মিলিয়ে কিছুটা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

সকল চাষিরাই বলেন, তারা তাদের জমি ফেলে না রেখে আগাম জাতের আমন ফসল কাটার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত সরিষা, কপি, লাইসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করছেন। বাদ যাচ্ছে না নদীর চরগুলোও। এতে বাজার থেকে যেমন কিনতে হচ্ছে না আবার টাটকা শাকসবজি বিক্রি করছেন ভালো দামে।

বাড়ির পাশে, সড়কের ধারে এমনকি নদীর চরে যে যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছেন আলু, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, লালশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডাঁটাশাক, কচুশাক, কাঁচা মরিচ, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষে ব্যস্ত রয়েছেন। জমিতে দিচ্ছেন সার-কীটনাশক। আগামী চৈত্র পর্যন্ত পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। আবার ফলন হওয়া বেগুন বাজারদর ৩০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি করছেন মান্নান মোল্লা। কৃষক রহিছ মিয়া নিজ জমিতে অন্য শস্যের পাশাপাশি লালশাক ফলিয়ে তা নিজে খাওয়ার পাশাপাশি বাজারে বিক্রিও করছেন।

বারহাট্টা এলাকার কিষানি সুফিয়া আক্তার বলেন, এবার ‘ধান কাটা শেষে ক্ষেতে সরিষা, মুলা চাষ করেছি এবং বাড়ির পাশে ঘরের চালে লাউ এবং শিমগাছ লাগিয়েছি। সবকিছু এখন টাটকা খাই, বাজারেও বিক্রি করি।’

বারহাট্টা উপজেলার গুহিয়ালা গ্রামের তপন চৌধুরী জানান, সরিষার পাশাপাশি আলু চাষ করেছেন তিনি। এখন সার দিচ্ছেন। আগামী চৈত্র মাসে ফলন হবে। এর মাঝে লালশাক, ডাঁটাশাক, ফুলকপিসহ নানা জাতের সবজি চাষ করায় এখন বাজার থেকে এসব কিনে খেতে হচ্ছে না তাদের।

নেত্রকোনা কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান জানান, তারা আট হাজার ৬০০ কৃষক পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে পাঁচ ধরনের সবজি বীজ দিয়েছেন। বসতবাড়িসহ সবখানে সবজি চাষ করতে পারে ওই পরিবারগুলো। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পতিত ও অনাবাদী ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আবাদের পরিকল্পনা নিয়েছি। এ ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সেটির কাজ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আরও একটি আশার বিষয় হলো, আমরা এ বছর বোরো ধানের ক্ষেত্রে ৭২ হাজার কৃষককে একটি সহযোগিতা দেব। এক বিঘা জমির জন্য তারা বিনা মূল্যে বীজ ও সার সহায়তা পাবেন। এতে নেত্রকোনা জেলায় উৎপাদন আরও বাড়বে। যেসব পতিত এবং অনাবাদি জমি আছে, তার বেশির ভাগ এতে ব্যবহৃত হবে।’

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলায় ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, তালিকা অনুযায়ী কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষা চাষিদের মাঝে সরিষা বীজ, সার এবং অন্যান্য সবজি চাষিদের মাঝে সবজির বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। আশা করি অনেক কৃষক এতে উপকৃত হবেন এবং লাভবান হবেন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন