বিলুপ্তর পথে রাঙ্গুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীন বাজার

বিলুপ্তর পথে রাঙ্গুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীন বাজার

মুবিন বিন সোলাইমান, চট্টগ্রাম:

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণাংশে কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় কোদালা ইউনিয়নের অবস্থান। প্রায় ৪০ হাজার জনসংখ্যার বসতি ও ৮৬১৬ একর (৩৪.৮৭ বর্গ কিলোমিটার) আয়তনের ইউনিয়নটি উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এ ইউনিয়নের দক্ষিণে পদুয়া, পশ্চিমে শিলক, উত্তরে কর্ণফুলী নদী পার হলেই মরিয়মনগর ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন এবং পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী, ও রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের অবস্থান।

আলোচিত ও দেশের বিখ্যাত ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে এটি একটি, তার বেশ কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি ১৮৯৪ সালে দেশের সর্ব প্রথম কোদালা চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃটিশরা কর্ণফুলি নদীপথ দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা ইউনিয়নের বির্স্তীণ জায়গা ও সবুজ কুঞ্জের সমরহ দেখে চা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, সেই থেকে এখন অব্দি বাগানটি দৃশ্যমান।
দ্বিতীয় ও অন্যতম কারণ কর্ণফুলী নদীর পার্শ্ববর্তী এবং সৈয়দ আলী সড়ক সংলগ্ন রাঙ্গুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীন কোদালা বাজার।

১৭৫৭ সাল থেকে চাকমা রাজন্যবর্গ শুকদেব রায়, শেরদৌলত খাঁ, জানবক্স খাঁ, টব্বর খাঁ, জব্বর খাঁ, ধরম বক্স খাঁ, রাণী কালীন্দি, হরিশ্চন্দ্র রায় প্রমুখ এ অঞ্চলে রাজত্ব করেছেন। কথিত আছে তখন থেকে এই বাজারের প্রচলন শুরু।

কোদালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলম মাস্টার বলেন, “রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় ২ থেকে ৩ শত বছরের প্রাচীন চন্দ্রঘোনা বাজার পরেই কোদালা বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময়  কোদালা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল মাঠসহ মূল বাজারটি বিশাল আকারের আয়তন ছিল, কিন্তু বর্তমানে নদী ভাঙ্গনে কবলে পড়ে বাজারটি চারভাগের একভাগ জায়গা অবশিষ্ট আছে। এখনো মনে আছে সপ্তাহ দুইদিন ২৪ ঘন্টা বাজারে ৩-৪ টি গরু মহিষের মাংস বিক্রি হত। ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের সমাগম এই বাজারের বেশির ভাগই কোদালা ও নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার।

তিনি আরো বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক ও জনপথের উন্নয়ন হয়েছে, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন আর মাটি বা ব্রিকের রাস্তা খুজে পাওয়া যায় না। তাই  যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে মানুষ এখন রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট ও শান্তির হাটে চলে যায়। রাঙ্গুনিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম কোদালা বাজারটি এখন স্মৃতির পাতায় ইতিহাস হয়ে আছে। এই বাজারটির পুনরায় নিজস্ব রূপ ফিরে পেতে নৌপথের বিকল্প নেই।

কোদালা ইউনিয়নের ৭৫ বছর বয়সী খোরশেদ আলম বলেন, গত ১৫-২০ বছর আগেও বাজারে সামুদ্রিক, নদী ও পুকুরের মাছ, গরু,মহিষ ও ছাগলের মাংস, মুরগি-কবুতর ও খেতি খামারি করা চাষীদের হরেক রকম মৌসুমী ফল-ফলাদি ও সবজি দেখা যেত, ছিল বিভিন্ন ধরনের অনেক দোকানপাট। এখন বিখ্যাত সেই কোদালা বাজারের দিকে তাকানো যায় না, কেমন যেন রুক্ষ বর্ণ ধারণ করেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন নৌপথ, নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হলে বাজারের লোক সমাগম পুনরায় হবে। বাজারের হিজারা ও নদী ঘাটের হিজারা দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে এবং এলাকার কিছু বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।

কোদালা বাজারের স্থানীয় মুদির দোকানিরা মনে করেন, কর্ণফুলীতে নৌপথে নৌযান প্রচলন শুরু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার থেকে মোদির দোকানের মালামাল সহজে আনতে পারবে এবং বাজারে আগত ক্রেতাদের জন্য সব ধরনের মালামাল রাখতে পারলে বাজারটি পুনরায় চাঙ্গা হবে।

স্থানীয় প্রবাসীরা বলেন, আমরা চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যেতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা হাতে রেখে সড়ক পথে যেতে হয়। নৌপথের দোয়ার খুলে দিলে রাঙ্গুনিয়ার প্রবাসীরা বিদেশ যাত্রা অল্প সময়ের সহজ ও নিরাপদ হবে। তাছাড়া আমরা প্রবাসীরা যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছি, আমরা দেখেছি বহির্বিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে নৌপথের প্রচলন রয়েছে।

কোদালা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, কোদালা বাজারের নিজস্ব রূপ ফিরে পেতে নৌপথের বিকল্প নেই এতে করে চাষিরা উৎপাদিত অতিরিক্ত ফসল চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে গেলে সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারে (সড়ক পথে নিয়ে গেলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয় যা উৎপাদিত ফসল বিক্রিত টাকার চাইতে ৩ গুণ বেশি)। তাছাড়া শহর থেকে চাষাবাদে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও বীজ কিনতেও সহজ হবে। নৌপথ সুগম হলে কোদালাসহ দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন কালের ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলো আবার নিজস্ব রূপ ফিরে পাবে বলে মনে করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন