বাণিজ্য মেলার সময় বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

বাণিজ্য মেলার সময় বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষের দিকে এসে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সংখ্যা। তবে মেলার আগত ব্যবসায়ীরা মেলার শুরু থেকে স্টল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে না পারায় অতিরিক্ত আরও সাত দিন সময় বাড়ানোর দাবি জানান মেলায় আগত ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে, ব্যবসা জমাতে পণ্যের ওপর ছাড়সহ নানা ধরনের সুবিধা চালু করেছেন ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের পর্দা নামতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। বৃহস্পতিবার মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নে সকাল থেকে আসা শুরু করেন দর্শনার্থীরা। তবে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী থাকলেও কাক্ষিত ব্যবসা করতে পারছেন না মেলার স্টল মালিকরা। এতে লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না হওয়ায় মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে এক সপ্তাহের সময় বাড়ানোর দাবি জানান স্টল মালিকরা। এদিকে মেলার শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমে উঠছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। বিক্রিত পণ্যের মধ্যে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য ও গৃহস্থালি পণ্যেরই চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে।
মেলায় আগত ব্যবসায়ীরা বলেন, পহেলা জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আমাদের অনেকের স্টল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি সে সময়। এতে করে আমরা বেশিরভাগ স্টল মালিকরা পিছিয়ে পড়েছি। তা ছাড়া মেলা জমতে জমতে আমরা কাক্ষিত ব্যবসা করতে পারিনি। যদি মেলা কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের সময় না বাড়িয়ে দেন; তবে আমরা ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ব।
মেলার স্টল মালিক জহির রায়হান বলেন, এবারের আসর শুরুর আগে সময় কম পাওয়ায় স্টল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে। এক সপ্তাহ সময় বাড়ানো না হলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। মেলার আরেক ব্যবসায়ী জিয়াউর হোসেন বলেন, মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও বেচাকেনা হচ্ছে না তেমন। তা ছাড়া এবার মেলায় স্টল অতিরিক্ত মূল্যে নিতে হয়েছে। ব্যবসা বাড়াতে ছাড় দিয়েছি অনেক পণ্যে। তারপরও আশানুরূপ বেচাকেনা হচ্ছে না। মেলার সময় বাড়ানো শুধু আমার একার নয়, দাবি সবার।
তুর্কি প্যাভিলিয়নের নাইম ইসলাম বলেন, মানুষ অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যয় সংকোচন করতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি কিনছেন। বিলাসবহুল বা কম প্রয়োজনীয় পণ্য অধিকাংশ ক্রেতাই কিনছেন না। আমাদের স্টলগুলোতে শুধু দেখছেন কিন্তু কিনছেন না। তাছাড়া প্রথম দিন থেকে স্টল নির্মাণ করতে পারিনি। দোকান শুরু করতে করতে ছয় থেকে সাত দিন চলে গেছে। তাই মেলায় সময় বাড়ানো না হলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।
সূত্র জানায়, গত ১ জানুয়ারি মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি ঢাকার ২৭তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। আগে বাণিজ্য মেলা শেরে বাংলা নগরের চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। ২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার প্রাঙ্গণ মেলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
মেলার প্রবেশদ্বার ইজারাদার কর্তৃপক্ষ অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন রাজিব বলেন, বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এবার মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ থাকবে। এ ছাড়াও মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
সূত্র জানায়, এবারের মেলায় মোট স্টল ৫০৬টি। এর মধ্যে ১২ দেশের ৩১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য নিয়ে এসেছে। পাকিস্তান, ভারত, চীন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মরক্কোর স্টল রয়েছে মেলায়। বিদেশি স্টলগুলোয় নানা রকম ছোটখাটো পণ্য ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র মতে, মেলায় প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, সাধারণ স্টলে বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা, খেলার সামগ্রী, খেলনা, স্টেশনারি, জুয়েলারি, সিরামিকস পণ্য, মেলামাইন পণ্য, দেশি বস্ত্র, আসবাবপত্র, হস্তজাতসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলা শেষের দিকে জমজমাট হচ্ছে। বিক্রিও প্রায় প্রতিদিনই বাড়তে শুরু করেছে। তবে স্টল মালিকরা অনেকেই নির্ধারিত সময়ের ভেতর চালু করতে পারেনি এটা ঠিক। তবে তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানোনো হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন