‘দাম কমায় এখন প্রতিদিন তরমুজ খাইতে পারতেছি’

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি আর সরবারহ বেশি থাকায় মাদারীপুরের বাজারগুলোতে তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হলেও বতর্মানে তার মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এতে তরমুজ ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। 

সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মাদারীপুর লেকপার বাজার, ইটেরপুল বাজার ও পুরান বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে মাদারীপুরের মস্তফাপুর ফলের আড়তে তরমুজ আসছে। সেই তরমুজগুলোকে আড়তদারা ছোট, বড় মাঝারি তিনটি অংশে ভাগ করে সারি সারি স্তূপ করে রেখেছে। আর এগুলো ক্রয় করতে দলে দলে খুচরা বিক্রেতারা ভিড় করেছেন। কেউ ট্রলি বা অটোরিকশা, ভ্যানে করে ভরে নিয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারে। আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি তরমুজ এসেছে আড়তগুলোতে। ফলে কেনাবেচাও বেড়েছে আড়তগুলোতে। রোজার শুরুতে প্রতিটি আড়তেও তরমুজ কেজি ধরে বিক্রি হতো। এর ফলে ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করার ফলে বর্তমানে আড়ত থেকে পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও পিস বিক্রি করছে কেউ কেউ। তবে সাইজ অনুযায়ী তরমুজের দামেও ভিন্নতা রয়েছে।

মাদারীপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে কৃষকদের খেতে এখন তরমুজ আর তরমুজের সমারোহ। তরমুজ কাটা ও বিক্রিতে ব্যস্ত কৃষক। তবে তরমুজ চাষের বড় এলাকা হচ্ছে শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলা। এখানকার তরমুজ সুস্বাদু ও মিষ্টি বলে জেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই আগাম তরমুজ চাষ করেছেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। বিগত বছরের চেয়ে এবার তরমুজ চাষে খরচ পড়েছে বেশি। দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির ফলে তাদের খরচও বেশি হয়েছে।

বরিশাল ঝালকাঠি থেকে মস্তফাপুর আড়তে তরমুজ নিয়ে আসা নাজমুল মৃধা নামের এক কৃষক জানান, বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হলে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে তাই তারা আগভাগেই তরমুজ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে ক্রেতাদের এতে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।

তরমুজ বিক্রেতা ওহিদ হাওলাদার বলেন, আগে আমরা অনেক টাকায় তরমুজ কিনে আনতাম। তাই বেশি টাকায় বিক্রি করতাম। এখন তরমুজ বেশি আসায় দাম কমেছে। তাই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

মাদারীপুর পৌর শহরের ইটেরপুল বাজারের তরমুজ বিক্রেতা রায়হান বলেন, ‘আমরা আগে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা দরে কিনে আনছি আড়ত থেকে। বিক্রি করেছি ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি কেজি। এখন আড়তেও দাম কমেছে, তাই আমরাও দাম কম রাখি।

লেকপার বাজারের তরমুজ ক্রেতা মিথিলা বলেন, ‘রোজার শুরুতে তরমুজের দাম বেশি ছিল। তখন তেমন তরমুজ কিনে খেতে পারি নাই। এখন দাম কমায় প্রতিদিন তরমুজ কিনে খেতে পারছি।’

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, এই কয়দিন তরমুজের দাম বেশি থাকায় কিনতে পারি নাই। আজ তরমুজের দাম কমায় কিনে খাইতে পারতেছি আল্লাহর রহমতে। আমার কাছে ভালো লাগতাছে। আমি এহন প্রতিদিন তরমুজ খাইতে পারব।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সন্তোষ চন্দ্র চন্দ জানান, ‘এ বছর মাদারীপুরে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে অনেক বেশি। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার জেলায় তরমুজও উৎপাদন বেশি হয়েছে। আগামীতে যাতে কৃষকরা বেশি বেশি তরমুজের আবাদ করতে পারে। এজন্য তাদেরকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।’

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন