১৫ দেশের অভিযানের শঙ্কায় আকাশসীমা বন্ধ করলো নাইজার, চরম উত্তেজনা

অভ্যুত্থানকারী সামরিক বাহিনীর নেতারা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর এক আল্টিমেটাম উপেক্ষা করায় নাইজারে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল রোববারের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দিলে পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ দেশের জোট দ্য ইকোনোমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) নাইজারে সামরিক অভিযান চালাবে বলে হুমকি দিয়েছিল। সেই আল্টিমেটামের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

ইকোওয়াস বলেছে, রোববারের মধ্যে জান্তা পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা নাইজারে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে একটি বিবৃতি জারি করবে। তবে বিদেশী শক্তিগুলো বলছে, তারা দেশটিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা করছে।

গত ২৬ জুলাই নাইজারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার ওই জোট। নাইজারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের এই ঘটনা গত তিন বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে সপ্তম অভ্যুত্থান।

ইউরেনিয়াম ও তেল সমৃদ্ধ দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন এবং রাশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে দেশটি।

ইকোওয়াসের আল্টিমেটামের মেয়াদ রোববার শেষ হয়েছে। জোটের সদস্যদের সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় ইতোমধ্যে নাইজারের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়ে দেশটির জান্তা বলেছে, সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আগে থেকেই সৈন্য মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।

নাইজারের জান্তার একজন প্রতিনিধি দেশটির সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, নাইজারের সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনগণের অবিচ্ছিন্ন সমর্থন রয়েছে। আমরা আমাদের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করতে প্রস্তুত।

ইকোওয়াসের সাথে দেশটির অচলাবস্থা তৈরি হলে তা বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ওই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কষাঘাত এবং ইসলামপন্থী বিদ্রোহের সাথে ব্যাপক লড়াই ওই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে। সংঘাতের কারণে লাখ লাখ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

ইকোওয়াসের প্রতিরক্ষা প্রধানরা নাইজারে সম্ভাব্য সামরিক কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ঐকমত্রে পৌঁছেছেন। তারা বলেছেন, যদি দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমেকে মুক্তি এবং ক্ষমতায় পুনর্বহাল করা না হয় তাহলে তারা সেখানে হস্তক্ষেপ করবে। তবে কখন, কোথায় সামরিক হামলা চালানো হবে, সেই বিষয়ে জোটের সদস্য দেশের প্রধানরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে, ঞ্চলিক প্রতিবেশী মালি এবং বুরকিনা ফাসোর ক্ষমতাসীন জান্তারা প্রয়োজনে নাইজারের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার মালির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেছে, উভয় দেশই নিয়ামিতে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে।

• কূটনৈতিক সফলতার আশা

আফ্রিকান এবং পশ্চিমা মিত্ররা ক্ষমতাসীন জান্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রচেষ্টা হিসেবে নাইজারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও  অন্যান্য সহায়তা কাটছাঁট করেছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি সোমবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাজোমকে ক্ষমতায় পুনর্বহালে নাইজারের জান্তাকে ইকোওয়াসের বেঁধে দেওয়া আল্টিমেটামের সময়সীমা বাড়ানো উচিত।

দেশটির সংবাদমাধ্যম লা স্টাম্পাকে তিনি বলেছেন, নাইজারের এই সংকটের সমাধানের একমাত্র উপায় কূটনীতি। আমি আশা করছি, ইকোওয়াসের আল্টিমেটাম যা গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়ে গেছে, তার মেয়াদ আজ বাড়ানো হবে।

তাজানি বলেন, এটা ঠিক যে তাকে (বাজোম) মুক্ত করা উচিত। কিন্তু আমরা তা করতে পারি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করবে, এটা অচিন্তনীয়।

রোববার ইতালির সরকার জানায়, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে নিরাপত্তার প্রয়োজন হতে পারে এমন ইতালীয় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তারা সেখানকার সামরিক ঘাঁটিতে জায়গা তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যে নাইজারে সৈন্য সংখ্যা কমিয়েছে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বাজোম বলেছিলেন, তাকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। দেশটিতে সাংবিধানিক শাসন পুনরায় ফেরাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ‘নাইজারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে অবিলম্বে পুনর্বহালের’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নাইজারের সরকার সুবিধা ভোগ করে এমন কিছু মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ফ্রান্সের ইউরোপবিষয়ক মন্ত্রী লরেন্স বুন সোমবার বলেছেন, নাইজারে যা ঘটছে তার নিন্দা জানানোর জন্য পশ্চিমা ও আফ্রিকানদের মধ্যে নজিরবিহীন ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল এলসিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি আশা করছি, আমরা দেশটিতে বিনা রক্তপাতে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতন্ত্র ও সংবিধান পুনর্বহাল করতে সক্ষম হব।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন