পুতিন-জিনপিং সম্ভাব্য বৈঠকের আগে রাশিয়ায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাশিয়া সফর শুরু করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেশটিতে চারদিনের সফর শুরু করেন তিনি। আগামী মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের আগে এই সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার রাশিয়ায় তার চারদিনের সফর শুরু করেছেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে উভয় দেশ গভীর পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া আগামী অক্টোবর মাসে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্ভাব্য যুগান্তকারী সফরের মঞ্চও প্রস্তুত করবে এই সফর।

ওয়াং ই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া সফরের সময় ওয়াং বার্ষিক নিরাপত্তা আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভের সাথে দেখা করবেন।

এছাড়া চলতি বছরের মার্চ মাসে মস্কোতে হাই-প্রোফাইল সফরের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে অংশ নেওয়ার জন্য চীনের রাজধানীতে পুতিনের সফরের ভিত্তি ওয়াং এই সফরেই স্থাপন করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে চীনের প্রথম দুটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইউক্রেন থেকে শত শত শিশুকে অবৈধভাবে বিতাড়িত করার অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকে তিনি আর বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বলে জানা যায়নি।

মূলত ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে চলতি বছরের মার্চ মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন।

আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।

অবশ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।

এছাড়া আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিন বা মারিয়া এলভোভা-বেলোভাকে আপাতত এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনও সুযোগ নেই।

এছাড়া চীন নিজেও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়।

অন্যদিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলন ও বৈঠক এড়িয়ে গেছেন। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন উপস্থিত হননি এবং দিল্লিতে চলতি মাসে জি-২০ ইভেন্টেও রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট নিজে উপস্থিত না হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে পাঠিয়েছেন।

অবশ্য গত ১ সেপ্টেম্বর পুতিন বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করবেন বলে আশা করছেন। যদিও তিনি ঠিক কবে আবার চীন সফর করবেন তা সেসময় স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেননি।

এর আগে গত মার্চ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিন দিনের সফরে মস্কোতে গিয়েছিলেন। আর অক্টোবরে বেইজিংয়ে পুতিনের এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলে সাত মাস পর ফের দেখা হবে পুতিন-জিনপিংয়ের। এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এই দুই নেতার ব্যক্তিগতভাবে দেখা হয়েছিল।

তারও আগে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়ে আগ্রাসন শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২২ সালের বেইজিং শীতকালীন গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করেছিলেন পুতিন।

অবশ্য চীন এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে এসেছে এবং পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সেটির নিন্দাও জানায়নি বেইজিং। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘আক্রমণ’ বলা থেকেও বিরত রয়েছে চীন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল।

উভয় নেতা সেসময় চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্বে ‘কোনও সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন। এছাড়া ইউক্রেন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন