নিয়ম অনুযায়ী প্রিজন ভ্যানে চড়ে আসামিরা আদালতে হাজির হবেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে আদালতে হাজিরের অনুমতি দেওয়া হলো।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) যাকাতের ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় বিচারিক আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এ জামায়াত নেতাকে এমন সুবিধা দিলেন। এদিন সাঈদীর দুই ছেলে শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদীকে আদালতে প্রবেশের অনুমতিও দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকাল পৌনে ১০ টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে আনা হয় সাঈদীকে।
এদিন, সাঈদীসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাতের কোটি টাকা আত্মসাত মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
তবে শুনানির শুরুতেই সাঈদীর আইনজীবী মো. মতিউর রহমান আকন্দ মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি তাদের কাছে না থাকার কথা জানিয়ে সময় আবেদন করেন। একইসঙ্গে সাঈদী অসুস্থ জানিয়ে তাকে প্রিজন ভ্যানের বদলে নিজ খরচে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে আদালতে হাজিরা দেওয়ার আবেদন করেন।
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করেন। তবে এদিন বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা আসামিপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে ১১ জানুয়ারি শুনানির পরবতী দিন ধার্য করেন।
আদালত জানান, এখন থেকে মামলার বিচারকাজ চলাকালীন পুরো সময় প্রিজন ভ্যানের বদলে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে আদালতে আসবেন সাঈদী। একইসঙ্গে, মামলার নথি আসামিপক্ষকে সরবরাহ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিন নজিরবিহীনভাবে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, ঘটনাটি তার জানা নেই। তিনি পরবর্তী দিন বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন।
এসময় গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে দুদক আইনজীবী বলেন, সাঈদীর আইনজীবীরা আদালত থেকে বার বার সময় নিচ্ছেন। তাদের কালক্ষেপণের কারণে ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ইসলামি ফাউন্ডেশনের ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত যাকাত বোর্ডের মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দলীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৪ মে দুর্নীতি দমন কমিশন শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করে। ২০১২ সালে সাঈদীসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, সাঈদীসহ আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে যাকাতের অর্থ গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিলি না করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দিয়ে আত্মসাত করেছে।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হক। আবুল কালাম আজাদ এবং আব্দুল হক পলাতক রয়েছেন। অপর তিন আসামি জামিনে আছেন।