মাহে রমজান সর্বোত্তম ব্যয়

দেখতে দেখতে ষষ্ঠ রমজান চলে এলো। রমজানে মোমিন বান্দা সর্বতোভাবে আল্লাহর নির্দেশ পালনে একনিষ্ঠ থাকে। মানবজীবনে আয় ও ব্যয় অতি পরিচিত এবং জীবন-ঘনিষ্ঠ দুটি বিষয়। ইসলামী জীবনবোধে বিশ্বাসী সবাইকে বৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ থেকে জীবন-জীবিকার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সম্পদ অর্জন আর সম্পদের খরচ জোগান- দুটোই হতে হবে সংবিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে। ইসলাম তাই ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের বিষয়টিকে মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসলামী জীবন-দর্শনে ব্যয়ের খাতগুলোও পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। কেউ সম্পদ অর্জন করবে আর বসে বসে শুধু সেই সম্পদের হিসাব করবে- এটি হতে পারে না। বরং জীবনের কল্যাণে, পরিবারের চাহিদা পরিপূরণে, সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে, জনকল্যাণমূলক কাজে অথবা মানবতা ও ধর্মীয় কল্যাণ সাধনে অব্যাহত ব্যয় করাই হচ্ছে প্রকৃত মানবাত্মার দায়িত্ব। সেই ব্যয় নানা সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন খাতে একেক রকম তাৎপর্য বহন করে থাকে। আল্লাহর পথে ব্যয় সব মোমিনের জন্য কাঙ্ক্ষিত বিষয়। পবিত্র মাহে রমজানে ব্যয় পুণ্যার্জন আর অধিকতর বরকত লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কেননা, রমজানে প্রতিটি ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সওয়াব দেওয়া হয়। পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসীদের যে গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে, তার অন্যতম হলো এই কল্যাণমূলক ব্যয়। তাই মহান আল্লাহর পথে ব্যয় এবং তা পবিত্র রমজানে- নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম ব্যয়ের পর্যায়ে উপনীত।

আল্লাহর পথে ব্যয় কী? আল্লাহকে সরাসরি কিছু দেওয়া যাচ্ছে না, আল্লাহর কোনো পরিবারও নেই, তার খাওয়ার, পরিধানের কোনো চাহিদাও নেই। কিন্তু আমরা যদি জমিনে তারই সৃষ্টজীবের প্রতি দয়াশীল হই, তাদের সেবা করি, আর্তমানবতার ডাকে সাড়া দেই- তাহলে এটিই হবে মহান আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। গোটা সৃষ্টিজগৎই হলো আল্লাহর পরিবার, সমগ্র বিশ্বই আল্লাহর সংসারের অন্তর্ভুক্ত। মহানবীর (সা.) ঘোষণা- তোমরা দুনিয়াবাসীর (সৃষ্টজীব) প্রতি রহম করো, তবে আকাশবাসী (আল্লাহ) তোমাদের ওপর রহম করবেন। ইসলাম, মানবতা, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, মুখাপেক্ষী, ফকির-মিসকিন, প্রার্থী, দরিদ্র তথা গোটা সৃষ্টির জন্যই আমরা নিয়মের মধ্যে যে ব্যয় করব, তাই মহান আল্লাহর পথে ব্যয়ের পরিধির মধ্যে পড়বে। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় মানে একটি সামগ্রিক ও ব্যাপক প্রসারিত বিষয়। পবিত্র কোরআনে রয়েছে- ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করার দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেন একটি শস্যদানা, যা সাতটি ছড়া উৎপন্ন করল এবং প্রতিটি ছড়ায় আরও ১০০টি করে দানা বের হলো। মহান আল্লাহ চাইলে তা আরও বহু পরিমাণে বৃদ্ধি করে দিতে পারেন।’ আল্লাহর পথে ব্যয় করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ মহান আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এই ব্যয় করার মধ্যেই রয়েছে প্রভূত সফলতা। ইরশাদ হচ্ছে- ‘যারা স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে দিবসে, রাতে আর প্রকাশ্যে বা গোপনে, তাদের জন্য পরম প্রভুর কাছে রয়েছে পুণ্য এবং তারা কখনও চিন্তিত বা শঙ্কিত হবে না।’ এই ব্যয়ের কোনো লোকসান নেই, বরং তা আরও সম্পদের প্রবৃদ্ধি দান করে। বলা হচ্ছে- ‘এমন কে আছে যে মহান আল্লাহকে তার সম্পদ ধার দেবে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে দ্বিগুণ বা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন।’

মহান আল্লাহ ব্যয়ের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে বলছেন- ‘আমি তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছি তা থেকে তোমরা তোমাদের মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো।’ আর সেই ব্যয়ের প্রকৃষ্ট মৌসুম আমাদের দ্বারে সমুপস্থিত। মাহে রমজানের এই পুণ্যলগ্নে আল্লাহর পথে ব্যয়ের মাধ্যমে আমরা যেন মানবতার কল্যাণ সাধনে ব্রতী হতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সব ব্যয় কবুল করুন (আমিন)।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment