সেক্স টয় বিক্রি বাড়ছে ঢাকায়, অধিকাংশ ক্রেতা মহিলা

সেক্স টয় বিক্রি বাড়ছে ঢাকায়, অধিকাংশ ক্রেতা মহিলা

সরকারি নিষেধাজ্ঞা বা সেন্সরবোর্ডের কাঁচিতে আটকে নেই যৌনতা। কৈশোর পেরিয়ে এবার প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে শহর। গোপনে হলেও ডিলডো বা প্লেজারপ্যাড শব্দগুলো এখন লাইফস্টাইলের প্রথম পাতায় উঠে এসেছে ঢাকাতেও। লাস ভেগাস, আমস্টারডাম বা রিও ডি জেনেইরোয়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে শহর ঢাকাও।

বিশ্বায়নের যুগে পশ্চিমী দেশের সংস্কৃতিতে মিশেছে দেশ। বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক পরে দেদারে সেলফিতে মাতছে বাঙালি। মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইল। এই দ্রুত পরিবর্তনের যুগে রক্ষণশীল শহর ঢাকাতেও দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সেক্স টয় ব্যবহারের চাহিদা।

সেক্স টয় বিক্রি বাড়ছে ঢাকায়, অধিকাংশ ক্রেতা মহিলা

পাশের দেশের দিল্লি, মুম্বাই অনেকদিন আগেই সেক্স টয় ব্যবহারে স্মার্ট সিটি। ঢাকার কতিপয় বাসিন্দা জানলেও তা হাতে পাওয়ার স্বপ্ন বোধহয় দেখতেন না। কিন্তু, গত কয়েকবছরে দেখা গেছে, ঢাকায় ব্যাপকহারে বাড়ছে সেক্স টয়ের চাহিদা। বিক্রেতা সংস্থাগুলোর দাবি, এই সেক্স টয়ের গ্রাহক সংখ্যার অধিকাংশরা হলেন ১৮ থেকে ৫০ বছরের মহিলা।

কী এই সেক্স টয় ?
এক কথায় আপেক্ষিকভাবে শারীরিক ও মানসিক কামনা মেটানোর ইলেকট্রনিক ডিভাইস। নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের আকৃতির মতো হয় এই ডিভাইস।

এর মেয়াদ কতদিন ?
মোবাইলের মতোই এই ডিভাইসের ব্যাটারি আছে। চার্জ দিলেই তা ফের নতুন। তাই একবার কিনলে গ্রাহকদের মেয়াদ নিয়ে আর কোনও চিন্তা নেই।

সেক্স টয় কি আইনস্বীকৃত ?
এদেশে সেক্স টয় অবৈধ। খোলা বাজারে এর বিক্রির কোনও সরকারি অনুমতি নেই। কিন্তু অনলাইনে নির্দিষ্ট কিছু সাইটের মাধ্যমে অবাধে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। জাপান ও চিন থেকে এদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে চলে আসছে সেক্স টয়। চলছে দেদার বিক্রিও।

ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন বা দেশের মূলস্রোতের অনলাইন শপিং সাইটে সেক্স টয় পাওয়া যায় না। কিছু সাইটে গেলে খুব অল্পদামে বিকোচ্ছে সেক্স টয়। দাম শুরু হয় ১০০ টাকা থেকে। ৫০০০ হাজার টাকা বা তার বেশি দামের সেক্স টয়ও পাওয়া যায় এই শপিং সাইটগুলোতে।

ঢাকায় খুব অল্প ব্যবসায়ী গোপনে সেক্স টয়ের ব্যবসা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ শহরের একজন সেক্স টয় ব্যবসায়ী নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন। তিনি বলেন, “এখন ডিলডোর বাজার অনেক চড়া। মহিলা গ্রাহকদের অর্ডারের সংখ্যা অনেক বেশি। মানুষের চিন্তাধারা বদলাচ্ছে, আধুনিক হচ্ছে। তাই টাকা দিয়ে যৌনসুখ কিনছে। পুরুষ গ্রাহকদেরও অর্ডার আসে। কিন্তু মহিলাদের তুলনায় তা অনেক কম।”

আমাদের প্রিয় শহর ঢাকা কীভাবে আর কোন কোন কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে, কথাপ্রসঙ্গে তাও জানালেন তিনি। ঢাকার মতো মেট্রো সিটিতে জায়গার অভাব দীর্ঘদিনের সমস্যা। উচ্চবিত্ত হোক বা মধ্যবিত্ত পরিবার। কেউ যে তাঁর নিভৃতে প্রেম করবেন, তার কোনও উপায় নেই। চাকরিও নেই। ধার করে আপনি হোটেল ভাড়া করবেন ? জানাজানি হলে পারিবারিক সম্মানের ভয়। এদিকে মানসিক ও শারীরিক চাহিদা চড়চড় করে বাড়ছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে একরকম ভয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা অন্যরকম।

তিনি জানালেন, যে মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবেন তাকে আপনি ঠিক কতটা বিশ্বাস করেন ? আগামী দিনে সম্পর্ক ভেঙে গেলে সে যে আপনাকে ধর্ষণের অভিযোগে ফাঁসাবে না, তার গ্যারান্টি কে দেবে ? মেয়েদের সমস্যা অন্যরকম। আপনার সঙ্গিনী গোপন মুহূর্তের ছবি তুলে রেখে আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে পারেন। সেই দায়ও বা কে নেবে ? এ তো গেল তরুণ প্রজন্মের কথা। দাম্পত্য জীবনেও বাড়ছে অশান্তি। স্বামী-স্ত্রী ১২-১৪ ঘণ্টা অফিস করে এসে ক্লান্ত। নিজের জীবনে কোনও সময় নেই। কোনও ছুটি নেই। কিন্তু শরীরের চাহিদা তো থেমে নেই। পরকীয়া সম্পর্কেও আছে নানারকম ঝুঁকি। তাই সব আশঙ্কার সমাধান হয়ে উঠেছে সেক্স টয়।

তিনি বলেন, আমরা সেক্স ডল আনারও চেষ্টা করছি। তবে এটা এখনি চলবে না। দাম বেশি। চাহিদা থাকলেও কেউ ঘরে রাখতে পারবে না লজ্জ্বায়। আর যেহেতু আকারে বড় তাই লুকিয়ে রাখা সম্ভব না।

তিনি বলেন, ইদানিং ‘পেনিস এনলার্জমেন্ট কনডমে’র চাহিদা বেশ বেড়েছে। পুরুষরা এগুলো অর্ডার করছেন। এটা একবার কিনলে অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি যাদের বিশেষ অঙ্গ ছোট তারা কিছুটা সাপোর্ট পায়।

শহর প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে মন্থরগতিতে। কিন্তু পর্যাপ্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেই সাবলীল হচ্ছেন নাগরিক। তাই খোলা ফুটপাতে বা নিউ মার্কেট কিম্বা বসুন্ধরা সিটি থেকে অনলাইন শপিং সাইটে বিশ্বাসী নগরবাসী। ব্যবসায়ীরাও এই দোকান জনসমক্ষে আনতে চান না। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, শহরে এখনও গোপনীয়তা আছে বলেই এই ব্যবসার বাজার আছে। প্রকাশ্যে সেক্স টয় ব্যবহারের মতো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেনি এখনও ঢাকা।

সেক্স টয় কি বিকৃত কাম ? নাকি সমাজে এর প্রয়োজন আছে ? একটি বেসরকারি হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান ঈশিতা বসু পুরো ঘটনাটি শুনলেন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্লেবয় বাংলাদেশেকে জানান, এই সেক্স টয়ের চাহিদাবৃদ্ধির কারণ। তিনি মনে করেন, মূলত তিনটি কারণে বাড়ছে সেক্স টয়ের চাহিদা। প্রথমত, সমাজের অগ্রগতি। আগে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্য মতামতে অনেকটাই ছেলেদের থেকে পিছিয়ে ছিল মেয়েরা। এখন অনেক বেশি সাবলীল তাঁরাও। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে দেশের সামগ্রিক মহিলাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ সেক্স টয়ের প্রতি আকৃষ্ট। তৃতীয়ত, আগেও সেক্স টয়ের সমান চাহিদা ছিল। কিন্তু, আইনত স্বীকৃতি ও জোগান না থাকায় অপারগ ছিল শহর। এবার বাজার খুলে যাওয়ায় সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন শহরবাসী।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment