মোঃ হুমায়ূন কবীর ফরীদি,জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:-
হাওর ও নদী বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার বোরো ফসল রক্ষা ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার পলি ভরাটকৃত ৬টি নদীর ৯৮ কিলোমিটার খননে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নলজোড় ও চামতি, রক্তি, যাদুকাটা, আপার বৌলাই, পুরাতন সুরমা নদী খনন করা হবে।
ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলাধীন জামালগঞ্জ উপজেলা ও বিশ্বম্ভর পুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত রক্তি নদী, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত যাদুকাটা নদী, জামালগঞ্জ উপজেলা ও ধর্মপাশার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত আপার বৌলাই নদীর খনন কাজ চলমান রয়েছে। পাউবো সূত্র জানাযায়, ১৭ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রক্তি নদী তীরবর্তী সংগ্রামপুর গ্রাম থেকে আবুয়া নদী রক্তি নদীর ৬ কিলোমিটার ও ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে যাদুকাটা নদীর ৬.১২৫ কিলোমিটার, ৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ধর্মপাশা উপজেলার সোনামড়ল ও জামালগঞ্জের হালীর হাওরের মধ্যবর্তী আপার বৌলাই নদীর ১৬ কিলোমিটার, প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই-শাল্লা ও কিশোরগঞ্জের মিটামইন এলাকার ভরাটকৃত পুরাতন সুরমা নদীর ৪০ কিলোমিটার, প্রায় ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার নলজোড় নদীর ভরাটকৃত ১০ কিলোমিটার ও প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই-শাল্লা উপজেলা অংশে চামতি নদীর ২০ কিলোমিটার খনন করা হবে। পাউবোর দাবি ইতোমধ্যে রক্তি নদীর ৫৩ ভাগ খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যাদুকাটা নদীতে একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন কাজ চলছে। আপার বৌলাই নদীতে এক সাথে ৩টি ড্রেজার নদী খনন করে যাচ্ছে; ইতোমধ্যে ৭ ভাগ খনন হয়েছে। পুরাতন সুরমার ৪০ কিলোমিটার খননে দরপত্র মূল্যায়ন শেষে চুক্তি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নলজোড় নদীর ১০ ও চামতি নদীর ২০ কিলোমিটার খননে নকশা প্রণয়নের জন্য জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই তিনটি নদী খননের কাজ শুরু করার চেষ্টা করবে পাউবো কর্তৃপক্ষ। পাউবোর সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকি ভুইয়া বলেন রক্তি, যাদুকাটা ও আপার বৌলাই নদী খননের কাজ পুরোদমে চলছে। আমরা যথাসময়ে এসব নদী খননের কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা করব। পাউবোর পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাহিনুজ্জামান বলেন,‘ পুরাতন সুরমা নদী খননে দরপত্র মূল্যায়ন শেষে চুক্তি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নলজোড় ও চামতি নদী খননের নকশা প্রণয়নের জন্য জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব নদী খননের বিষয়টি সরকার বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখছে। সম্প্রতি এক জনসভায় পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন,অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে বৃহত্তর সিলেটে আমরা একটি ব্যয়বহুল নদী খনন কাজ হাতে নিয়েছি। সিলেট বিভাগের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াইসহ প্রধান প্রধান নদীগুলো খনন করা হবে। সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, রক্তি, পুরাতন সুরমা, বৌলাই নদী খননের কাজ হচ্ছে। এসব নদী খননের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে অকাল বন্যার কবলে না পড়ে কৃষকরা হাওরের বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারেন। ’ গত ২৩ নভেম্বর সুনামগঞ্জে আপার বৌলাই নদী খনন কাজ পরিদর্শন শেষে সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজে মতবিনিময়কালে পানিসম্পদ মন্ত্রী এসব কথা বলেন।