হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে জাপার রাজ্যে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে জাপার রাজ্যে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি

রামেন্দ্র কিশোর মিত্র শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :-
তিন উপজেলার সমন্বয়ে হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ)। ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৫৮ জন। আসনটিতে টানা দুইবার আওয়ামী লীগ, এর আগেও একবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়লাভ করায় ঘাঁটি হিসেবে খাতায় নাম লিখিয়েছে। তবে এক সময় এ আসনটি জাতীয় পার্টির রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের দুর্গে আঘাত হানতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী জিকে গউছ। তিনি এতটাই জনপ্রিয় যে, গত পৌর নির্বাচনে কারাগারে থেকেও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গউছ কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করছেন। এ আসনটি জেলা সদর হওয়ায় সংঘত কারনেই জেলাবাসীর নজর হবিগঞ্জ-৩ এর প্রতি। হবিগঞ্জ-৩ মানেই জাতীয় পার্টি, এমপি হিসেবে ছিলেন আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী (প্রয়াত)। এরশাদের রাজনৈতিক পতন আর মুবিন চৌধুরী পার্টি বদল করে বিএনপিতে যোগদানের কারনেই হয়তো
হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে  জাপার রাজ্যে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিজাপা’র আসনটি হাত ছাড়া হয়।৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার হাত ধরে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। ৯ম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালিন সাধারন সম্পাদক (বর্তমান সভাপতি) এড. আবু জাহির বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। ফলে লোকমুখে এ আসনটি আওয়ামী ঘাটিতে রূপ নেয়। জাতীয় পার্টি চায় হারানো রাজ্য ফিরিয়ে আনতে। প্রার্থী হিসেবে জাপা কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা জাপার আহ্বায়ক আতিকুর রহমান আতিক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও জেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক ব্রিটেন প্রবাসী প্রকৌশলী এমএম মুমিন চৌধুরী বুলবুলের নির্বাচনী প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১২ সালের ৬ অক্টোবর হবিগঞ্জের নিউ ফিল্ডের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া জনগণের উদ্দ্যেশে বলেছিলেন, আমাকে এমপি দিন, আমি উন্নয়ন দেবো। এই কথা মাথায় রেখে হবিগঞ্জের বিএনপি’র নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে মরন কামড় দিতে চান বলে দলের একাদিক সুত্রে জানা গেছে। ফলে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘরে বসে নেই, চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ থেকে মাঠ, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য নানা ভাবে শুরু করেছেন প্রচার প্রচারনা। নির্বাচনী এলাকায় ডিজিটাল পোষ্টার, ফেষ্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা আগাম প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। পথসভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দোয়া ও ভোট চাইছেন তারা। এ ছাড়া এসব নেতাদের ছবি স¤॥^লিত পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে এলাকা। বিএনপি যদি হারানো দুর্গ ফিরে পেতে চায় তাহলে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। কারণ আ’লীগের প্রার্থী একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তার সঙ্গে দুর্বল প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধ জমে উঠবে না। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘোরার পাশাপাশি দলের মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।গরিব-দুঃখী পরিবারকে আগে থেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছেন জিকে গউছ। তিনি মনোনয়ন পেলে আসনটি বিএনপি দখলে নিয়ে চমক সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন বলে তার সমর্থকরা দাবি করেছেন।বিএনপি’র প্রার্থী জিকে গউছ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মাঠে। তিনি ইতোমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় জন সমর্থন নিতে ইতোমধ্যেই গ্রামে গ্রামে ‘উঠান বৈঠক’ করেছেন। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ড্যাব সভাপতি ডাঃ আহমদুর রহমান আবদাল বিভিন্ন হাটবাজারে পোস্টার লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এনামুল হক সেলিমও বসে নেই। তিনিও মনোনয়নের আশায় হাটবাজার, রাস্তাঘাটে পোস্টার, লিফলেট ও ফেস্টুন সাঁটানোর মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।ভোটাররা বলেছেন, গউছ ভাই প্রার্থী হলে জয় নিশ্চিত। কারন জনসেবা ও উন্নয়নে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন-হবিগঞ্জ পৌরসভায় তিন বারের মেয়র নিবার্চিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন দিয়ে পুরো জেলায় তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকেই জেলার উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়। উন্নয়নের ছোঁয়ায় ইকোনমিক্স জোন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আধুনিক স্টেডিয়াম, সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া, জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে অনার্স, মাস্টার্স কোর্স চালু করা, মেডিকেল কলেজ, জুডিসিয়াল ভবন নির্মাণ এবং শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলায় রূপান্তরসহ সব উন্নয়নই এ আমলে হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম, হাওর সবখানেই উন্নয়ন হয়েছে। তাছাড়া এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে পরিচিত। তাই আমি আশা করি আগামী নির্বাচনেও হবিগঞ্জ- ৩ সহ জেলার ৪টি আসনই আমরা দলকে উপহার দিতে পারবো। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আলহাজ জি.কে গউছ বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল। এখানে নিজে থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে। তারা প্রার্থী নির্বাচন করেন। তিনি বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিএনপি’র রাজনীতি করছি। দল যে সময় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা মেনে নিয়েছি। কারাগার থেকে দলের সিদ্ধান্তে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সবকেন্দ্রে আমার এজেন্ট পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে পৌরবাসী আমাকে নির্বাচিত করেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না সন্দিহান। যতক্ষণ পর্যন্ত সহায়ক সরকার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গত পৌর নির্বাচনে পুলিশের শত তৎপরতা সত্ত্বেও মানুষ বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, হবিগঞ্জ-৩ ও হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে আমি মনোনয়ন চাইব। বিশেষ করে হবিগঞ্জ-৩ আসন বরাবরই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এখানে টানা ৩ বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হবিগঞ্জকে মহকুমা থেকে জেলায় পরিণত করেন। বিগত এরশাদ সরকারের আমল থেকেই ওই এলাকায় উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ইনশাল্লাহ্ বিজয়ী হব। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেও আমি বিশ্বাস করি।কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেও চাচ্ছেন নির্বাচন সুষ্ঠু করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment