চকরিয়া-ফাঁসিয়াখালী বনাঞ্চলে অবৈধ ইটভাটা, শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে নারী-শিশু

চকরিয়া-ফাঁসিয়াখালী বনাঞ্চলে অবৈধ ইটভাটা, শ্রমিক হিসেবে কাজে ব্যবহার হচ্ছে নারী-শিশু

মোহাম্মদ উল্লাহ, চকরিয়া, কক্সবাজার:-
                                              হুমকিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ, ল চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী বনাঞ্চলের পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে সরকারি অনুমোদন বিহীন অন্তত ৫টি অবৈধ ইটভাটা। বর্তমানে এসব ইটভাটায় নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছ। অন্যদিকে স্কেভেটার দিয়ে কৃষিজমি ও পাহাড় কেটে ইট তৈরির উপকরণ হিসেবে মাটি জোগাড় করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল, অপরদিকে পাহাড় কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। পাশপাশি চরম হুমকির মুখে পড়েছে পাশের সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র। অভিযোগ উঠেছে, এসব ইটভাটায় সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী ও শিশুকে। এ অবস্থার কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব শ্রমিকরা।
চকরিয়া-ফাঁসিয়াখালী বনাঞ্চলে অবৈধ ইটভাটা, শ্রমিক হিসেবে কাজে ব্যবহার হচ্ছে নারী-শিশুস্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এসব অবৈধ ইটভাটায় স্কেভেটার দিয়ে রাত-দিন পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে চলছে। জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছ। শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু ও নারীদের। প্রশাসনের কোন ধরণের বৈধতা না নিয়ে ইটভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে পরিবেশ বিপন্নকারী এসব ইটভাটার মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, সনাতন পদ্ধতির (ড্রাম চিমনি) ইটভাটার মাধ্যমে এসব ভাটায় ইট পুড়ানোর কারনে অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণ হলেও রহস্যজনকভাবে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনাঞ্চলের ভেতরে ও বনাঞ্চলের পাদদেশে অবস্থিত এসব ইটভাটাগুলো এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আশপাশের এলাকা পুরোপুরি মরুভূমিতে পরিণত হবে। বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে বড়-বড় ট্রাকে করে ইট পরিবহণের ফলে সরকারী অর্থে নির্মিত রাস্তাঘাট ও কালভার্ট ভেঙ্গে যাতায়াতে জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাঁসিয়াখালীতে অবস্থিত ইট ভাটাগুলোর অবস্থান হচ্ছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের অদূরে বগাইছড়ি-মালুম্মা এলাকায় এমএসবি ব্রিকস, হারহাজা এলাকায় এইচবি ব্রিকস, রইঙ্গাঝিরি এলাকায় কেবিসি ব্রিকস, ইয়াংছা কাঁঠালছড়া এলাকায় কেসিবি ব্রিকস ও সাপের গাড়া এলাকায় একটিসহ মোট পাঁচটি ইটভাটা রয়েছে।
স্থানীয় ইটভাটা মালিকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের পাঁচটি ইটভাটা স্থাপনে সরকারিভাবে কোন ধরণের অনুমতি নেই একথা সত্য। তবে আমাদের ইটভাটায় প্রশাসনের যে কোন ধরণের অভিযান ও দেখভালের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক মো. মকবুল হোসেন বলেন, চকরিয়া উপজেলায় বেশি ইটভাট নেই। তবে লামা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইট ভাটা পরিবেশের জন্য হুমকি। তিনি বলেন, এসব ইটভাটা বান্দরবান জেলার অধীনে হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অফিস আদেশমতে দেখভাল করেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর। এব্যাপারে তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ফাঁসিয়াখালীতে যেসব ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে বনাঞ্চলের গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে তা স্থানীয় বনবিভাগকে অবহিত করুন। তবে পাহাড় কাটার বিষয়টি আমাদের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হবে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা পেলে অভিযুক্ত ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা দেওয়া হবে। ##

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment