বাসাইলে কৃষি জমিতে নির্মিত হচ্ছে ইটভাটা

বাসাইলে কৃষি জমিতে নির্মিত হচ্ছে ইটভাটা

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কলিয়া গ্রামে কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। কোনো ধরনের নীতিমালা না মেনে ‘দেলোয়ার হোসেন অ্যান্ড কোং’ নামে ওই ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগসহ কোনো বিভাগেরই লাইসেন্স ও প্রত্যয়ন না থাকলেও থেমে নেই এর নির্মাণ কাজ। পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও প্রভাব খাটিয়ে ভাটা মালিক নির্মাণ কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন।
বাসাইলে কৃষি জমিতে নির্মিত হচ্ছে ইটভাটাঅপরিকল্পিত ও নিয়ম বর্হিভূতভাবে এই ইটভাটা নির্মাণের কারণে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের উপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে এমন আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিশেষ করে চাষাবাদের ক্ষতি হবে বলে শঙ্কাবোধ করছেন তারা। স্থানীয়রা জানায়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন (২০১৩) অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার এবং গ্রামীণ বা ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা থেকে অন্তত অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ ওই গ্রামে নিয়ম না মেনে স্থাপন করা হচ্ছে ইটের ভাটা। ভাটার দু’পাশেই এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে দু’টি বাজার, বসত বাড়ি ও তিন ফসলি জমি। ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে গ্রামীণ সড়ক। সেই রাস্তা দিয়ে তিন টনের অধিক মালামাল বহনকারী যানবাহন চলাচল করছে। যা ইটভাটা আইন নীতিমালার পরিপন্থী। সব ধরনের সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে ইটভাটা নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

এ নিয়ে ইটভাটার উত্তরের গ্রাম কাউলজানী দক্ষিণ পাড়ার হোমিও চিকিৎসক আলতাফ হোসেন বলেন, এখানে ইটভাটার সরবরাহ শুরু হলে স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রাত হবে সাধারণ মানুষ। গাছে কোনো ধরণের ফল আসবে না। বাড়ি ঘরেও মানুষ বসবাস করতে পারবে না। অবিলম্বে ভাটার নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে। একই গ্রামের শরীফ খান বলেন, ইটাভাটার চারপাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোমলমতি শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হবে। পরিবেশের ওপর নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। মজনু ভূইয়া বলেন, ভাটার পাশেই রয়েছে আমাদের প্রচুর ফসলী জমি। এসব জমিতে বছরে তিনটি ফসল হয়। ইটভাটা হলে আমাদের জমিসহ গ্রামে কারো কোনো ফসল হবে না। আমরা দ্রুতই এই ভাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাটা নির্মাণের অনুমতির জন্য সবগুলো অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এখনো অনুমতি পাইনি। তবে দ্রুতই অনুমতি পাওয়া যাবে।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এখানে কিভাবে ইটভাটা করছে বুঝতে পারছি না। এটি তিন ফসলি জমি। আমাদের কাছে প্রত্যয়ন চাওয়া হয়েছিল। তবে আমরা তিন ফসলের জমিরই প্রত্যয়ন দিয়েছি। টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কলিয়ার ইটভাটা নির্মাণে আমাদের কাছে একটি আবেদন করা হয়েছে। তবে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। আমরা ভাটার মালিককে নোটিশ করেছি সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য। এরপরেও কার্যক্রম চালিয়ে গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহান স্বপ্না জানান, ইটভাটা নির্মাণের জন্য অবশ্যই তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। আমি সরোজমিনে সেখানে যাবো। যদি লাইসেন্স না নিয়ে থাকেন তাহলে ইটভাটার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment