র‌্যাম্পে হাঁটবে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরীরা

র‌্যাম্পে হাঁটবে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরীরা

ডিজাইনার পোশাক আরঅলঙ্কার পরে এবার র‌্যাম্পে হাঁটবে কলকাতার হোমে আটক রোহিঙ্গা সহ অন্য শিশু-কিশোরীরা। আগামী মাসেই কলকাতার ‘উত্তীর্ণ’ মঞ্চে অনুষ্ঠিতব্য এই ফ্যাশন শো’ মাতাতে দেখা যাবে ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী হোমের ছোট বাচ্চাদের।
র‌্যাম্পে হাঁটবে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরীরাপশ্চিমবঙ্গের সরকার পরিচালিত সবচেয়ে বড় শেল্টার হোম হাওড়া জেলার লিলুয়ার ‘সুন্দরবাই মুলচাঁদ মোহতা’ (এসএমএম)। বর্তমানে এই সরকারি হোমটিতে ২০০ নারী ও কিশোরী রয়েছেন, যার মধ্যে ১৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। এই হোমেরই ৬ জন রোহিঙ্গা সহ ৩৩ জন কিশোরীকে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি’র নিজের সৃষ্টি ‘ব্র্যান্ড বাংলার’ ডিজাইনার পোশাক পরে র‌্যাম্পে হাঁটতে। আর এই পোশাকগুলি বানাবে তাদেরই হোমের সহকর্মীরা।

সময় হাতে নেই তাই জোরকদমে চলছে প্রশিক্ষণ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল।

পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার কমিশন’এর চেয়ারপার্সন অন্যনা চক্রবর্তী জানান ‘আগামী ৭ মার্চ কলকাতার ‘উত্তীর্ণ’ মিলনাতায়নে এই ‘ফ্যাশন শো’এর অনুষ্ঠান হবে। লিলুয়া হোমের কিশোরীরা যাতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাশালী হয় সেব্যাপারে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কিছু করার কথা বলেছিলেন।

এই উদ্যোগের পিছনের মূল কারণ হল শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তারা যাতে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসে তার চেষ্টা করা। এই ধরনের প্রচেষ্টা ভারতে অভিনব, যেখানে পাচার কৃত কিশোরীরাই ‘ফ্যাশন শো’এ অংশ নেবেন। হোমের অন্য সহকর্মীদের তৈরি পোশাক ও গহনা পরেই ওই কিশোরীরা র‌্যাম্পে হাঁটবে’।

গত বছরের এপ্রিল মাস থেকেই লিলুয়া হোমের কিশোরীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিবি রাশেল। রাজ্যের শিশু অধিকার কমিশন সূত্রে খবর ফ্যাশন শো’এর পর ব্র্যান্ডের পণ্যগুলিকে বিশ্ব বাংলা স্টলের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে এবং আয়ের একটি অংশ হোমের কিশোরীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

অনন্যা চক্রবর্তী আরও জানান ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ব্র্যান্ড বাংলার লোগো ডিজাইন করেছেন। এই ধরনের ফ্যাশন শো’এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোকে প্রদর্শিত করা হবে এবং বিশ্ব বাংলা স্টলগুলোতেও তার প্রদর্শন ও মার্কেটিংও করা হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে পোশাকগুলোও তৈরি করা হচ্ছে’।

ডিজাইনার পোশাক পরে হোমের কিশোরীরা যখন র‌্যাম্পে ঝড় তুলবে তখন মঞ্চের চারদিক থেকে আসবে বাংলা গানের সুর। এমব্রয়ডারীর কাজ, গামছা, তাঁতের শাড়ি সহ বিভিন্ন পণ্যগুলি প্রদর্শন করা হবে। ‘ফ্যাশন শো’ ছাড়াও বাংলা ব্যান্ড ‘সুরমা দোহার’ এর একটি অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে ওইদিন।

রাজ্যটির নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা এই মহান উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেন ‘আমরা বিলুপ্ত প্রায় হ্যান্ডলুমকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। আমরা বিবি রাশেলকেও পেয়েছি, তিনিই হোমের কিশোরীদেরকে পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বাংলার তাঁত শিল্পীদেরকেও এই কাজে সহায়তা করার জন্য ডাকা হয়েছে। বিবি রাশেলের নির্দেশনায় এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। গত বছর থেকেই এই ধরনের কাজ শুরু হয়েছে। হোমের মধ্যেই কিশোরীদেরকে পোশাক ও গহনা তৈরি শেখানো হচ্ছে। এতে তাদের দক্ষতারও বিকাশ ঘটবে’।

উল্লেখ্য, ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদির সরকার কঠোর মনোভাব নিলেও তার সমালোচনা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি-এই কারণ দেখিয়েই তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিষয়টি দেখা উচিত বলে বিভিন্ন সভা থেকে মমতা তার মতামত জানিয়েছিলেন। মমতার অভিমত ছিল সকল উদ্বাস্তুরাই সন্ত্রাসী নয়। সূত্রে খবর এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কারাগারে প্রায় ৪৪ জন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু রয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment