খননের অভাবে ঝিনাইদহের ১২টি নদী পরিনত হয়েছে মরা খালে

রিয়াজ উদ্দীন (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ
খননের অভাবে ঝিনাইদহে অধিকাংশ নদ-নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে। ফলে নদী তীরে জেগে ওঠা চরে করা হচ্ছে চাষাবাদ। অন্যদিকে নদী দখল উৎসবে মেতে উঠেছেন নদী তীরের বসবাসকারী প্রভাবশালীরা। নদী দখল মুক্ত করতে বা খনন করে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কোন প্রদক্ষেণ গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ঝিনাইদহের নবগঙ্গা নদীতে পাওয়া যেত পর্যাপ্ত ঝিনুক। সেই সুত্র ধরেই জেলার নামকরন করা হয় ঝিনাইদহ। নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ১২ টি নদী। এসব নদী গুলো ছিল প্রচন্ড প্রমত্তা।
খননের অভাবে ঝিনাইদহের ১২টি নদী পরিনত হয়েছে মর। খালেনদীতে পাওয়া যেত মিঠা পানির মাছ, চলাচল করতো বড় বড় নৌকা। যার সুত্র ধরে নদী পাড়ে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীর পানি দিয়ে করা হত চাষাবাদ। কিন্তু এ চিত্র এখন একেবারেই উল্টো। নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। করা হচ্ছে ধান, সরিষা, কালাই, মশুড়ী, পেয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। চরানো হচ্ছে গবাদি পশু। নদীতে কমেছে মিঠা পানির মাছ। বর্ষা মৌসুমে নদীতে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করা যায় হেটে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমার নদের শৈলকুপা অংশের জিন্না আলম ডিগ্রি কলেজ এলাকা, বারই পাড়া এলাকা, কবিরপুর, বিজুলিয়া, হাট ফাজিলপুর অংশসহ বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে বড় বড় চর।
অন্যদিকে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে নদী দখল। মানুষ দেদারছে মেতে উঠেছে নদী দখল উৎসবে। নবগঙ্গা নদীর ধোপাঘাটা ব্রীজ, চাকলাপাড়া, মডার্ন এলাকা, কুমার নদের জিন্না আলম ডিগ্রি কলেজ এলাকা, কবিরপুর, শৈলকুপা নতুন ব্রীজ, চিত্রা নদীর নিমতলা এলাকা, পুরাতন বাজার এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে তীর দখল করে নির্মান করা হচ্ছে ঘর-বাড়ি, দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদী তীর থেকে যে যার মত করে কেটে নিচ্ছে মাটি। ড্রেনের ময়লা পানি গিয়ে মিশছে নদীতে। এসব কারনে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, সেই সাথে মাছসহ জলজ প্রাণী তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ নিয়ে কথা হয় শৈলকুপার কবিরপুর এলাকার চাষী সাত্তার মন্ডলের সাথে যিনি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। তিনি জানান, প্রায় ২৫ বছরের মত নদী তীরে চর জেগে উঠেছে। সেই থেকেই তিনি এই চরে ফসল চাষ করছেন। ফলনও হচ্ছে ভাল। শুধু বর্ষার সময় অল্প কিছুদিন পানি থাকে। অন্যান্য সময় পানি থাকে না এমনকি শুকনা মৌসুমে নদী একেবারেই শুকিয়ে যায়।
কালীগঞ্জের অসিত কুমার জানান, প্রায় ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে চিত্রা নদীতে জাল ফেলে ও বরশি দিয়ে মাছ শিকার করেন। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কেজি মাছ পাওয়া যেত এখন তা কমে দায়িছে ১ কেজিতে। আবার কখনও তাও পাওয়া যায়না।
পরিবেশবিদ মাসুদ আহম্মেদ সঞ্জু জানান, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে জালের মত নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশকে বলা হয় নদী মার্তৃক দেশ। কিন্তু আজ সেটি স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক ও মানুষ্য সৃষ্ট কারনে নদীগুলো আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এতে করে এক সময় প্রচুর পানির সংকট সৃষ্টি হবে। এছাড়া নদীতে বিভিন্ন জলজ প্রাণী বসবাস করে যারা পরিবেশের সাথে ওৎপ্রোত ভাবে জড়িত। নদী ভরাট হয়ে যাওয়া ও নানা ভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারনে দিন দিন কমে যাচ্ছে এসব প্রাণী। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে এক সময় পরিবেশ চরম হুমকির মুখে পড়বে। তাই বিশেষজ্ঞ ও সর্বস্তরের মানুষের দাবি নদীগুলো যেন অতি দ্রুত খনন ও দখল মুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক প্রবহজমানতা ফিরিয়ে আনা হয়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন বলেন নদী খননের বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী বদ্ধ পরিকর। নদীগুলো খনন করে তার স্বাভাবিক নাব্যতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে আমি সকলকে সাথে নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে নদীগুলো খনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদী গুলো হলো, নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকী ও বুড়ী। যার আয়তন ১৬’শ ৪১.৭৫ হেক্টর।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment