রাবার ড্যাম বদলে দিয়েছে চিরিরবন্দরের কৃষকের ভাগ্য

রাবার ড্যাম বদলে দিয়েছে চিরিরবন্দরের কৃষকের ভাগ্য

মন্জুর আলী,দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ-
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে কৃষিতে। শুধু কৃষিতে নয় এ প্রকল্পকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটন এলাকা।

আগের অনাবাদি জমিগুলো পরিবর্তিত হয়েছে আবাদি জমিতে। সেচ সুবিধার আওতায় আসায় লাভবান হচ্ছেন নদীর দুই কুলের প্রায় ৫ হাজার কৃষক পরিবার। কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো বেকারের। রাবার ড্যাম প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে কাঁকড়া নদীর উপরে রাবার ড্যামটি নির্মিত হয়েছে। নদীর উত্তর দিকে যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।
কোথাও ১৫ ফুট আবার কোথাও ২০ ফুট পানির গভীরতা লক্ষ্য করা গেছে। সারাবছরই বর্ষাকালের মতই নদীর ভরাট থাকে। নদীতে সবসময় পানি থাকায় চলছে ছোট-বড় অনেক নৌকা। এসব নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করা হয়। রাবার ড্যামের উপরে একটি ফুট ব্রিজ ও পার্শ্বে দর্শনাথীদের সুবিধার্থে কংক্রিটের ঢালাই করা ছাতা, বসার বেঞ্চ ও বাংলো ঘর নির্মিত হয়েছে।

এতে তৈরি হয়েছে পর্যটন স্পট। ড্যামের পশ্চিম-উত্তর দুদিকে গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকান। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে বেকারদের। রাবার ড্যামের উপরে ফুট ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় ৮নং সাইতাড়া, ৫নং আব্দুলপুর ও ৭নং আউলিয়াপুকুর এলাকার মানুষের মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, চিরিরবন্দর উপজেলার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সালে উপজেলার কাঁকড়া নদীর উপরে ৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ১৩০ ফুট দীর্ঘ রাবার ড্যামটি নির্মাণ করে দিনাজপুর এলজিইডি। এ রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে চিরিরবন্দর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর ১০ কিলোমিটার, পাশ্ববর্তী ১২কিলোমিটার এবংকয়েকটি শাখা খালে সারাবছর পানি আটকে রাখা সম্ভব হয়েছে।

উপজেলা এলাকার ২৪টির মধ্যে ১২টি বন্টকের ১২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। রাবার ড্যাম নির্মাণের পর কুশলপুর, খোচনা, পশ্চিম সাইতা, দক্ষিণ পলাশবাড়ী, উত্তর ভোলানাথপুর, আন্দারমুহা, অমরপুর, ভিয়াইল, কালিগঞ্জ, তালপুকুর, পুনট্রি, উচিতপুর, তুলশিপুর, নারায়ণপুর ও গোবিন্দপুর গ্রামের অনাবাদি জমিগুলো চাষ সুবিধার আওতায় এসেছে।
এতে ৪ হাজার ৯৫০ জন কৃষক ড্যামের পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। সাইতাড়া গ্রামে কৃষক মো. এনতাজুল হক জানান,আমাদের জমিগুলো উর্বর হওয়া সত্ত্বেও সেচের অভাবে আগে অনাবাদি ছিল। রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এখন কয়েকটি এলাকায় চারটি করে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন তারা।

আমন, ইরি, আলু, সরিষা, ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করে আমরা লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। চাহিদা অনুযায়ী নদী ও খাল থেকে পানি তুলে কৃষকেরা অনায়াসে জমিতে সেচ দিতে পারছেন। এতে ফসল উৎপাদন আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে। এনতাজুলের মতো একই মত দিয়েছেন কৃষক পলাশ চন্দ্র, দেবেন্দ্র নাথ রায়, মশির উদ্দিন, বাবু অনিলসহ অনেকে।

চিরিরবন্দর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, প্রতিদিন দর্শনার্থীরা রাবার ড্যাম প্রকল্প পরিদর্শনে আসছেন। শীত মৌসুমে এখানে অনেক বনভোজনে আসছেন। রাবার ড্যাম প্রকল্পের আর্শিবাদে শুধু কৃষকদের ভাগ্যই বদলায়নি, পুরো
এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশেও ভারসাম্য এনেছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment