রাউজানে বর্ষ বরণ করে নিতে ঐতিহাসিক মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে উৎসবের আমেজ

রাউজানে বর্ষ বরণ করে নিতে ঐতিহাসিক মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে উৎসবের আমেজ
অামির হামজা রাউজান প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামে রাউজানে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহামুনিতে বৈশাখী মেলা শুর হতে যাচ্ছে, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় অবস্থিত এই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বাংলার প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী মহামুনি মেলা। এদিকে নতুন করে বর্ষ বরণ করে ও পুরাতন বছরকে বিদায় নিতে রাউজানে প্রাচীন ঐতিহাসিক মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‍অনুষ্ঠিত হবে এ মেলা।

প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতি বছর চৈত্র্য সংক্রান্তির শেষ দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে। ঐতিহাসিক এ মেলা চট্টগ্রাম জেলার  এবং পার্বত্য আদিবাসী এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক মিলনমেলায় পরিনিত হয়। রাউজানে মহামুনি মেলাকে ঘিরে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় জমে থাকে। এই মেলার প্রধান আর্কষণ হলো পানি খেলা। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী মেয়েরা বিভিন্ন রকম রং পানি একে অন্যের দিকে ছুড়ে মারে। বর্ষবরণ উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলেচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটকসহ গ্রামের মেয়েদের নৃত্যানুষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও ব্যাপক অায়োজন করতে দেখামিলে।

মহামুনি মন্দির অধক্ষ্য অভয়ানন্দ মহাথেরো জানান, কদলপুর গ্রামে ‘চাইঙ্গা ঠাকুর’ নামের এক বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু এই বিহারে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে মহামানব গৌতম বুদ্ধের মূর্তি স্থাপন করেন বলে এর নামকরণ করা হয় মহামুনি মন্দির। মন্দিরের নাম অনুসারে কদলপুর গ্রামের নাম বদলে মহামুনি হিসেবে পরিচিতি পায়। এই মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ১৮৪৩ সালে মং সার্কেল রাজা চৈত্র্যের শেষ তারিখে মেলার আয়োজন করেন। পরবর্তী সময়ে মেলাটি মহামুনি মেলা নামে পরিচিত লাভ করে। চৈত্র্য সংক্রান্তির দিন পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা সারাদিন অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় বুদ্ধের পুণ্য লাভের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে।

মহামুনি সাংস্কৃতিক সংঘটনের সদস্য সুদ্বিপ্ত বড়ুয়া বলেন, বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমাদের সাংস্কৃতিক সংঘ, মহামুনি তরুণ সংঘ বর্ষবরণ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু সপ্তাহব্যাপী আলোচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান, নাটক, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বেশ কিছু আয়োজন ইতি মধ্যে শেষ করা হয়েছে, এতে রয়ছে অারো নানা অায়োজন। মহামুনি মেলাকে ঘিরে মন্দির চত্বরে দেশের বিভিন্ন শিল্পের নানা উপকরণের সমারোহ ঘটে। এ ছাড়া হরেক রকম মিষ্টি, বাহারি প্রসাধনী, স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলসহ শতাধিক দোকান বসে এই মহামুনি বৈশালী মেলায়।

১৪২৪ বাংলা সন বিদায় এর ঘন্টা বাজিয়ে নতুন বাংলা ১৪২৫ নববর্ষকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে বরণ করতে চট্টগ্রামের রাউজানের পাহাড়তলীর প্রাচীন মহামুনি বৌদ্ধমন্দিরটিকে অপূর্ব সাজে সাজানো হয়েছে। বাংলা বছরের শেষ দিনে এ মন্দিরে প্রতিবছরের নেয়ে এবছরও পূজা দিতে আসবেন পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। এবার পরিবেশ-পরিস্থিতি সব দিক থেকে অনুকূল থাকায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে বিপুলসংখ্যক উপজাতি নর-নারী চৈত্রের শেষ দিন ১৩ এপ্রিল (৩০ চৈত্র) শুক্ররবার ভোর সকাল থেকে এখানে সমবেত হবেন। আদিবাসী পুণ্যার্থীরা এখানে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন। পরদিন ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ সকালে অাদিবাসীরা বিদায় নেবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment