কোটা বাতিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ‍হুমকি দেখেছেন রিজভী

কোটা বাতিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ‍হুমকি দেখেছেন রিজভী

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে মত দিয়েছেন তাতে জাতি হতাশ হয়েছে বলে মনে করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি এই ঘোষণায় সরকার প্রধানের হুমকি দেখেছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যত না কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল সমস্যাটি সমাধানের দিক নির্দেশনা এসেছে তার চেয়ে বেশি এসেছে ক্ষোভ প্রকাশ, বিরক্তি ও হুমকি।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কূটচাল রয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা কয়েকদিনের আন্দোলনে রাজপথ স্থবির হয়ে পড়ার পর বুধবার জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্য কোটা থাকারই দরকার নেই বলে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংস্কার করতে গেলে, কয়দিন পর আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই হবে সংস্কার। আর না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই।’

প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধিও দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পরদিন দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের দাবি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন।’

‘প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিলেন সেটি বাস্তবায়িত হলে এর বিরুদ্ধে যে কেউ রিট করলে তা বাতিল হয়ে যাবে। কারণ সংবিধানে এ বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু কোটার যে বিষয়গুলো বিধানে নেই, সেগুলো সংবিধান সংশোধন ছাড়াই সরকার সংস্কার করে তা কমিয়ে আনতে পারে।’

‘শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য আন্দোলন করছে না, তারা আন্দোলন করছে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সরকারের সাবেক অর্থসচিব ড. আকবর আলি খান ছাত্র-ছাত্রীদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু গতকাল জাতীয় সংসদে এই কোটা বাতিলের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী গোটা জাতিকেই হতাশ করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে রিজভী বলেন, ‘সংবিধানে অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীকে কোটা দেয়ার বিধান সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। ‘আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কোটার বিরোধিতা করেনি।’

রিজভী বলেন, ‘এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং রাতেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও হয়েছে। তাহলে স্পষ্টতঃই বোঝা যায়- সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরে আন্দোলনকারীদের ওপর এই হামলা ও মামলায় অশান্তি বাড়বে, কমবে না।’

‘আসলে আওয়ামী লীগের সব কাজই প্রকৃতপক্ষে এক ছল। প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও শপথ ভঙ্গ করলেন।’

বুধবার সুরের ধারার ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ ‘প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে-ঢাকাসহ সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, যখন রাজধানী স্থবির হয়ে পড়েছে, যখন সরকারি বাহিনীর গুলিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, তখন সুরের ধারা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গানের সুরে তাল মেলাচ্ছেন।’

‘এ যেন রোম পুড়ছে আর নীরো বাঁশি বাজাচ্ছে। আওয়ামী সরকার দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়ার সরকার।’

বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment