‘বন্ধুরা মাঠে খেলাধুলা করে তাকিয়ে দেখে অঙ্কন’

‘বন্ধুরা মাঠে খেলাধুলা করে তাকিয়ে দেখে অঙ্কন’

ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
বন্ধুরা যখন স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করে তখন গাছতলায় বসে কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন সরকার অঙ্কন। সবাই খেলতে পারলেও সে খেলতে পারে না। তখন স্পন্দন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে একা চুপটি করে বসে থাকে। খেলার সময় আশেপাশে স্পন্দনকে দেখতে না পেয়ে বন্ধুরা তাকে খুঁজে পায় শ্রেণিকক্ষে। নিজের অসুস্থ্য বন্ধুকে খুশি রাখতে তখন বন্ধুরাই স্পন্দনকে নিয়ে মেতে ওঠে গল্পে। আর এভাবেই স্কুলে কেটে যায় স্পন্দন সরকার অঙ্কনের দিনগুলো।

স্পন্দন সরকার অঙ্কন ১৮ বছর থেকে বংশগত রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে তাদেরকে সুস্থ্য রাখতে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। আর এ ধারা চলে যুগের পর যুগ ধরে। একমাত্র অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনই এই রোগের কার্যকরী চিকিৎসা। আর ব্যয়বহুল এই অপারেশন বর্তমানে করতে হয় দেশের বাহিরে।

পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, স্পন্দন সরকার অঙ্কন জন্মের দুই বছর পর ২০০১ সালে এই থ্যালাসেমিয়া রোগটি ধরা পড়ে। এরপর থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয় স্পন্দনকে। এবছর স্পন্দন গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ছে। মেধাবী এই ছাত্রের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ৭০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এজন্য তার বাবা দেব দুলাল সরকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে।

স্পন্দনের বন্ধু নিবিড়, তানভীর, নিলয়, সাব্বির, নয়ন ও মৃদুল জানায়, আমরা আমাদের এই বন্ধুকে কখনো বুঝতে দেইনা যে সে অসুস্থ্য। সবসময় ওকে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করি। যখন সে দুর্বল হয়ে পড়ে তখন শ্রেণিকক্ষে ওর পাশে বসে গল্প করে সময় কাটাই। সবসময় কেউ না কেউ আমাদের এই অসুস্থ্য বন্ধুর পাশে থাকি। যখন সে স্কুলে আসতে পারে না তখন বাড়ীতে গিয়ে ওকে সাজেশনসহ পড়াশোনায় সহযোগিতা করি। আর সেই বন্ধু এখন অপারেশনের টাকার অভাবে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রায় সময়ই এখন ওর মুখ মলিন দেখতে পাই আমরা।

স্পন্দন সরকার অঙ্কন জানায়, একসময় আমিও আর ১০জন ছেলের মতো নদীতে সাঁতার কাটতাম, দৌড়াতাম, খেলতাম। সবই করতে পারতাম। কিন্তু এখন অসুস্থ্যতাজনিত কারণে সেসব কিছুই করতে পারি না। বন্ধুরা খেলাধুলা করে আমি শুধু তাদের দিকে চেয়ে থাকি। আমি বাঁচতে চাই। এসব কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে স্পন্দন সরকার অঙ্কন।

স্পন্দন সরকার অঙ্কনের বাব দেব দুলাল সরকার বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমার একমাত্র ছেলেটি থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছে। এরপর থেকে তাকে সুস্থ্য রাখতে প্রতি মাসে দুই ব্যাগ করে রক্ত দিয়ে সুস্থ্য রাখতে হয়। তারপরও দুশ্চিন্তায় সে ধীরে ধীরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। তার চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে আমি প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেছি। কিন্তু আর টাকা জোগাড় করতে পারছি না।

চিকিৎসক বলেছেন, স্পন্দনের ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের একটি অপারেশন করতে হবে। তা না হলে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে। এই অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়ে করতে প্রায় ৭০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। আর সেই টাকা জোগাড় করার সামর্থ নেই বাবা দেব দুলাল সরকারের। স্পন্দন সরকার অঙ্কন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম ইউনুসের তত্তাবধানে রয়েছে।

বর্তমানে স্পন্দন সরকার অঙ্কনের বয়স চলছে ১৮ বছর সাড়ে চারমাস। চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না হলে স্পন্দনকে হয়তো আর বাঁচানো যাবে না। তাই একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে দেব দুলাল সরকার সমাজের বিত্তবান ও মানবপ্রেমি মানুষদের কাছে ছেলের চিকিৎসার টাকার জন্য সাহায্য চেয়েছেন।

স্পন্দন সরকার অঙ্কনকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা- দেব দুলাল সরকার, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর : ৩৪০৫১০১৫, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ডিবি রোড শাখা, গাইবান্ধা। পার্সোনাল বিকাশ নম্বর: ০১৭১৯-৮২৬২০০
‘বন্ধুরা মাঠে খেলাধুলা করে তাকিয়ে দেখে অঙ্কন’

ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : বন্ধুরা যখন স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করে তখন গাছতলায় বসে কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন সরকার অঙ্কন। সবাই খেলতে পারলেও সে খেলতে পারে না। তখন স্পন্দন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে একা চুপটি করে বসে থাকে। খেলার সময় আশেপাশে স্পন্দনকে দেখতে না পেয়ে বন্ধুরা তাকে খুঁজে পায় শ্রেণিকক্ষে। নিজের অসুস্থ্য বন্ধুকে খুশি রাখতে তখন বন্ধুরাই স্পন্দনকে নিয়ে মেতে ওঠে গল্পে। আর এভাবেই স্কুলে কেটে যায় স্পন্দন সরকার অঙ্কনের দিনগুলো।

স্পন্দন সরকার অঙ্কন ১৮ বছর থেকে বংশগত রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে তাদেরকে সুস্থ্য রাখতে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। আর এ ধারা চলে যুগের পর যুগ ধরে। একমাত্র অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনই এই রোগের কার্যকরী চিকিৎসা। আর ব্যয়বহুল এই অপারেশন বর্তমানে করতে হয় দেশের বাহিরে।

পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, স্পন্দন সরকার অঙ্কন জন্মের দুই বছর পর ২০০১ সালে এই থ্যালাসেমিয়া রোগটি ধরা পড়ে। এরপর থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয় স্পন্দনকে। এবছর স্পন্দন গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ছে। মেধাবী এই ছাত্রের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ৭০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এজন্য তার বাবা দেব দুলাল সরকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে।

স্পন্দনের বন্ধু নিবিড়, তানভীর, নিলয়, সাব্বির, নয়ন ও মৃদুল জানায়, আমরা আমাদের এই বন্ধুকে কখনো বুঝতে দেইনা যে সে অসুস্থ্য। সবসময় ওকে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করি। যখন সে দুর্বল হয়ে পড়ে তখন শ্রেণিকক্ষে ওর পাশে বসে গল্প করে সময় কাটাই। সবসময় কেউ না কেউ আমাদের এই অসুস্থ্য বন্ধুর পাশে থাকি। যখন সে স্কুলে আসতে পারে না তখন বাড়ীতে গিয়ে ওকে সাজেশনসহ পড়াশোনায় সহযোগিতা করি। আর সেই বন্ধু এখন অপারেশনের টাকার অভাবে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রায় সময়ই এখন ওর মুখ মলিন দেখতে পাই আমরা।

স্পন্দন সরকার অঙ্কন জানায়, একসময় আমিও আর ১০জন ছেলের মতো নদীতে সাঁতার কাটতাম, দৌড়াতাম, খেলতাম। সবই করতে পারতাম। কিন্তু এখন অসুস্থ্যতাজনিত কারণে সেসব কিছুই করতে পারি না। বন্ধুরা খেলাধুলা করে আমি শুধু তাদের দিকে চেয়ে থাকি। আমি বাঁচতে চাই। এসব কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে স্পন্দন সরকার অঙ্কন।

স্পন্দন সরকার অঙ্কনের বাব দেব দুলাল সরকার বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমার একমাত্র ছেলেটি থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছে। এরপর থেকে তাকে সুস্থ্য রাখতে প্রতি মাসে দুই ব্যাগ করে রক্ত দিয়ে সুস্থ্য রাখতে হয়। তারপরও দুশ্চিন্তায় সে ধীরে ধীরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। তার চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে আমি প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেছি। কিন্তু আর টাকা জোগাড় করতে পারছি না।

চিকিৎসক বলেছেন, স্পন্দনের ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের একটি অপারেশন করতে হবে। তা না হলে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে। এই অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়ে করতে প্রায় ৭০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। আর সেই টাকা জোগাড় করার সামর্থ নেই বাবা দেব দুলাল সরকারের। স্পন্দন সরকার অঙ্কন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম ইউনুসের তত্তাবধানে রয়েছে।

বর্তমানে স্পন্দন সরকার অঙ্কনের বয়স চলছে ১৮ বছর সাড়ে চারমাস। চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না হলে স্পন্দনকে হয়তো আর বাঁচানো যাবে না। তাই একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে দেব দুলাল সরকার সমাজের বিত্তবান ও মানবপ্রেমি মানুষদের কাছে ছেলের চিকিৎসার টাকার জন্য সাহায্য চেয়েছেন।

স্পন্দন সরকার অঙ্কনকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা- দেব দুলাল সরকার, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর : ৩৪০৫১০১৫, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ডিবি রোড শাখা, গাইবান্ধা। পার্সোনাল বিকাশ নম্বর: ০১৭১৯-৮২৬২০০

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment