অর্থপাচারের আলোচনা অনেকটাই গুজব: মুহিত

অর্থপাচারের আলোচনা অনেকটাই গুজব: মুহিত

অর্থপাচার নিয়ে যেসব আলোচনা চলছে, তার অনেকটাই গুজব বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার দাবি, যেভাবে বিষয়টি নিয়ে আলাচনা হয়, অত পাচার হয় না।

বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থনীতি বিটের রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফর এর  সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পর্যায়ক্রমে দেশে মাধ্যমিক সব স্কুল সরকারিকরণ হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার সব সময় একটি আলোচিত বিষয়। তবে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। যদিও ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি—জিএফআই ২০১৭ সালের ১ মে প্রকাশিত ‘উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থপাচার : ২০০৫-২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ১০ বছরে পাচার হয়েছে কমপক্ষে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা।

গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চারটি কৌশলে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার হচ্ছে। এগুলো হলো আমদানি-রপ্তানিতে পণ্য ও সেবার ওপর ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং করা।

অর্থপাচার নিয়ে ‍যত আলোচনা, সেই তুলনায় ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ কম। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থপাচারের বিষয়টি যেভাবে আলোচিত হয়, আসলে ততটা পাচার হয় না।এর অনেকটাই গুজব।’

এই আলোচনায় করপোরেট কর, আয়কর, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। জানান, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে কর করপোরেট কমাবেন তিনি।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়ন সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘দ্বিতীয় গুরুত্ব পাবে পরিবহন ও জ্বালানি খাত’। বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো হবে এলও জানান মন্ত্রী।

লোকসানি বলে বাংলাদেশে চিকিকল বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘চিনিশিল্প পুরোপুরি আখের ওপর নির্ভরশীল নয়। এই শিল্পকে ট্যারিফ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। অথচ বিদেশ থেকে আমদানি করলেই আমরা এই চিনি কম দামে পেতে পারি। কাজেই আমার মতে, চিনিশিল্প রাখা উচিত নয়।’

মাধ্যমিকের সব স্কুল জাতীকরণ হচ্ছে

মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘কিছু নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ থাকবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে ফেলব। প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হয়ে গেছে। সিক্স-এইট পর্যন্তও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাতীয়করণ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান শিক্ষকের সঙ্কট থাকলেও সার্বিকভাবে এ শিক্ষার অবস্থা ভাল।’

‘সেকেন্ডারি স্কুলের সংখ্যার দিক থেকে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এখন কোয়ালিটির দিকে নজর দিচ্ছি। আগামী বজেটেও কিছু সংখ্যক এমপিও দেব। কিন্তু এমপিও শুধু শিক্ষকদের জন্য হবে না। এমপিও হবে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উপকরণের জন্য। এজন্য আলাদা আলাদা করে বরাদ্দ রাখা হবে। এ বরাদ্দটাও নির্ধারণ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।’

এমপিও সংস্কারের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় খুব বেশি আগ্রহী নয় বলেও জানান মুহিত। বলেন, ‘তারা সেভাবে সহযোগিতা করছে না।’

অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, ইআরএফ এর সভাপতি সাইফ ইসলাম বিলাল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিজভী নেওয়াজ,  সাবেক সভাপতি জাকারিয়া কাজল প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment