জুমআ’র নামাজ ও উহার আদব মুফতী মুহা : আবু বকর বিন ফারুক।।

মহান আল্লাহ উম্মতে মোহাম্মাদিয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত বলে অধিষ্ঠিত করেছেন এবং তাদের জন্য সপ্তাহের মধ্যে জুম’আর দিন কে সায়্যিদুল আইয়াম হিসেবে নির্ধারণ করেছেন যা ইয়াহুদীদের শনিবার এবং খ্রিষ্টানদের রবিবার চেয়েও উত্তম ও উৎকৃষ্ট। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন অনুবাদঃ ওহে মুমিনগণ ! যখন জুময়ার দিন জুময়ার নামাযের জন্য আহবান করা হয় তখন তােমরা আল্লাহর জিকরের দিকে ধাবিত হও এবং ব্যবসা বাণিজ্য পরিত্যাগ কর । ইহাই তােমাদের জন্য অতি উত্তম কাজ , যদি তােমরা জান। (আল- কুরআন) হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে , হযরত রাসূল মাকবুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , নিশ্চয়ই জুময়ার রাত ও দিনে মােট ২৪ ঘণ্টা , উহার প্রতি ঘণ্টায় ছয়লাখ জাহান্নামীকে দোষখ হতে মুক্ত করা হয় । ( আহমদ , গুনিয়া)। হযরত আলী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে , হযরত রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুময়ার রাত আগমন করলে উহাকে মুক্তির রাত এবং মাগফিরাতের রাত বলে ও খােশ আমদেদ ( সংবর্ধনা ) জ্ঞাপন করতেন । সৌভাগ্য তার জন্য যিনি তােমার মধ্যে নেক আমল করেন এবং ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য যে তােমাদের মধ্যে গুনাহের কাজ করে । মহান আল্লাহ প্রত্যেক জুমআর রাতে এক লাখ বান্দাকে দোযখ হতে মুক্তি দেন যারা দোযখের অধিকারী । ( তাবরানী ) তাবরানী শরীফে আরাে আছে :- অনুবাদঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ দিনগুলাে সৃষ্টি করেছেন এবং ঐ দিনগুলাে হতে জুময়ার দিনকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং উম্মতে মুহাম্মদীকে সমস্ত উম্মতের উপর প্রাধান্য দান করেছেন । জুময়ার দিনে বান্দা যে সব নেক আমল করে মহান আল্লাহ উহার প্রত্যেক আমলের বিনিময়ে সত্তরটি নেকী লিপিবদ্ধ করেন । জুমার দিনে বা রাতে কেহ মৃত্যুবরণ করলে তার অগ্র ও পশ্চাতের সমস্ত পাপ মহান আল্লাহ মাফ করে দেন এবং এ দুনিয়া হতে লােকটি ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে বিদায় নেয় । হযরত ইবনে ওমর ও হযরত আনাস বিন মালিক ( রাঃ ) বলেছেন , হযরত রাসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী , আরশের নীচে একটি শহর আছে । আল্লামা কুরতবী তদীয় তাফসীরে লিখেছেন , আরশের নীচে দুনিয়ার ন্যায় সত্তরটি শহর ফেরেশতা দ্বারা পরিপূর্ণ রয়েছে ঐ সমস্ত ফেরেশতা দোয়া করতেছেন , যথা হে প্রভু ! আপনি যারা জুময়ার দিন গােসল করে তাদেরকে মাফ করুন ! ঐ দিনের গােসলের কারণে প্রত্যেক পশমের গােড়া হতে গােনাহ সমূহ ঝরে যায় । বর্ণিত হাদীছ শরীফ ইমাম তিবরানীর মুজামে কবীর কিতাবে বর্ণিত আছে , রাবী সব নির্ভরশীল । । মুজামে কবীর ও মুজামে আওসাত কিতাবে বর্ণিত আছে , যে ব্যক্তি জুময়ার দিন গােসল করে ঐ গােসলের দরুন তার সমস্ত গােনাহ ক্ষমা করে । দেয়া হয় । যখন গােসলের পর জুময়ার নামাযের জন্য রওয়ানা করে তখন মহান আল্লাহ তার প্রত্যেক কদমে ২০টি নেকী লিখে দেন । নামায পড়ে যখন বাড়ী ঘরে রওয়ানা হয় তখন তাকে দুইশত বছরের আমলের পুরস্কার দেয়া হয় । ইবনে ওমর ( রাঃ ) হযরত রাসূল মকবুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেছেন , যে ব্যক্তি জুময়ার দিন গােফ কাটে এবং স্ত্রীর নিকট যদি সুগন্ধি থাকে উক্ত সুগন্ধি শরীরে মর্দন করে এবং উত্তম পােশাক পরিধান করে জুময়া পড়ার উদ্দেশ্যে জামে মসজিদের দিকে চলতে থাকে এবং মসজিদে ওয়াজ করার সময়ে বাজে কথাবার্তা না বলে । তাহলে এক জুময়া হতে দ্বিতীয় জুময়া পর্যন্ত সমস্ত পাপ মাফ করে দেয়া হবে । । আর যদি মসজিদে এসে মানুষের গর্দান ডিংগিয়ে সামনে যায় এবং বাজে কথা বলে তার সমস্ত নেক আমল বাতিল হয়ে যাবে , ছওয়াব হতে মাহরুম হবে। হুযুর আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , তােমরা সাদা পােশাক পরিধান কর । উহা উত্তম ও পবিত্র এবং উহা দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরাও (তিরমিজী শরীফ) । হযরত রাসূল আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ও তার অগণিত ফেরেশতা মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মতের মধ্যে যারা জুময়ার দিন পাগড়ী পরিধান করে তাদের উপর দরুদ শরীফ পাঠ করতে থাকেন । সুবহানাল্লাহ ! অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে , পাগড়ীর সহিত এক ওয়াক্ত নামাজ বিনা পাগড়ীর ২৫ ওয়াক্তের চাইতে উত্তম । আর পাগড়ীর সাথে জুময়ার নামায বিনা । পাগড়ীতে ৭০ জুময়ার নামাযের চাইতে উত্তম । ইমাম বায়হকীর ফাজায়েলুল আমাল কিতাবে লিখিত আছে , হুযুর আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , যে ব্যক্তি সূরায়ে এখলাছ হাজার বার পাঠ করল করল সে জান্নাতে তার বাসস্থান না দেখে মৃত্যু বরণ করবেন অথবা তার বেহেশতের ঠিকানা দেখান হবে । রাসূল আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তােমাদের উপর জুময়ার নামায এদিনে এ মাসে এ বছরে ফরয করেছেন । যদি কেই এ জুমার নামাজ হালকা মনে করে না । পড়ে , সাবধান ! তার কোন প্রকার নামায , যাকাত ও হজ্জ কিছুই কবুল করা হবে না। আর তিনি জুমআর দিনে সাপ্তাহিক জুমআর নামায শরীয়ত সম্মত করে নিয়েছেন যা জোহরের নামাযের স্থলাভিষিক্ত । এটা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের প্রতি তার বিরাট অনুগ্রহ। ( ৩ ) হযরত জাবির ( আ . ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন – হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন , মহান আল্লাহ তোমাদের প্রতি জুমআর নামায ফরজ করে দিয়েছেন । এ স্থানে , এ মাসে , এ বছরে কিয়ামত পর্যন্ত । যে ব্যক্তি আমার যুগে বা পরবর্তী যুগে চাই তাঁর ইমাম । রাষ্ট্রপতি ) ন্যায়পরায়ণ হোক বা অত্যাচার হােক ।তুচ্চ বা এনকার বশত : উহা ( জুমআর নামাজ ) তরক করলে আল্লাহ পাক তার দীন – দুনিয়ায় কোন কাজে বরকত দিবেন না ।সাবধান ! এহেন ব্যক্তির নামায , যাকাত , হজ্জ , রােজা ও কােন নেকী আল্লাহ পাকের নিকট গ্রহণযােগ্য হবেনা যে পর্যন্ত না সে তওবা করবে । তাই যে ব্যক্তি তওবা করবে আল্লাহ পাক তার তওবা কবুল করবেন । ( ইবনে মাজা ) । হযরত ইবনে উমর ও হযরত আবু হুরায়রা ( রা . ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর মিম্বরের খুঁটির উপর দন্ডায়মান অবস্থায় বলতে শুনেছি যে ,শেষ জমানায় জুমআ তরককারী একদল লোক বের হবে , আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মহর করে দিবেন অত:পর তারা আল্লাহকে ভুলে যাবে। ( মুসলিম শরীফ ) হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন – রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন , বিনা ওজরে যদি কোন ব্যক্তি জুমআ তরক করে সে ব্যক্তি চিরস্থায়ী আমলনামায় মুনাফিক বলে লিখিত হয় যা মার্জানা হবে না এবং পরিবর্তন হবে না । ( শাফেয়ী । হযরত আবু হুরায়রা ( রা . ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন – হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন জুমআর দিন উপস্থিত হয় , ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজার উপর দাঁড়িয়ে যযান এবং কে সর্বপ্রথম আসলাে , তারপর কে আসলাে এভাবে লিখতে থাকে । যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম আসে সে একটি উট ছদকা করার ছওয়াব পাবে। তারপর যে আসবে সে একটি গরু ছদকা কবার ছওয়াব পাবে । তারপরে যে আসবে সে একটি বকরী ছদকা করার ছওয়াব পাবে । আর পরবর্তীজন একটি মুরগী তৎপরবর্তীজন একটি ডিম ছদকা করার ছওয়াব পাবে । অত : পর যখন ইমাম খুৎবা দিতে বের হন ফেরেশতাগণ তাদের দপ্তর বন্ধ করে খুৎবা শুনতে থাকেন । ( বুখারী ও মুসলিম শরীফ ) যে ব্যক্তি জুম’আর দিন (কাপড় চোপড়) দুইবে ও ভালরূপে গোসল করবে, অত:পর সকাল-সকাল প্রস্তুতি গ্রহণ করত প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে হাজির হবে এবং সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে রওনা করবে আর মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকটে বসবে অতঃপর চুপ করে তার খুতবা শ্রবণ করবে এবং বেহুদা কোন কথা বা কাজ করবে না তার প্রত্যেক কদমে তার এক বছরের আমলের সওয়াব হবে অর্থাৎ এক বছরের নফল রোজা ও নফল নামাজের সওয়াব হবে। (তিরমিজী শরীফ) হযরত আবু লুবাবা বিন আব্দুল মুনজির রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন -জুমার দিন হলো সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন,আল্লাহ পাকের নিকট বিরাট সম্মানিত দ্বীন এমনকি আল্লাহ পাকের নিকট উহা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। (ইবনে মাজাহ)

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment