শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন’বলেন রিজভী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নির্মাণ করতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর দেড় শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঠে নামছেন। যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তারা এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘এরা আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে দেখা করবেন এবং আপনার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন। এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নির্বাচনে যুক্ত হয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডকে আরও বেগবান করবেন। আপনি যাতে পরবর্তীতে আবার বিজয়ী হতে পারেন, সে লক্ষ্যে এরাও কাজ করবেন।’

তারিক সিদ্দিক বলেন, ‘যেমন যাচ্ছে সেভাবে যেন এগিয়ে যাওয়া যায়, ভবিষ্যতে যেন কোনো বাধা না আসে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’ এসময় সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের একাত্মতা ঘোষণা আমাদেরকে ও দেশবাসীকে শক্তি এবং সাহস জোগাবে।’

অন্য বক্তরাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় রাখতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন এবং সবাই হাত তুলে সমর্থন দেন।

রিজভী বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আচরণ বিধির ১৪ ধারায় বলা আছে, সরকারের সু্বধিাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেড়শো সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার যে অঙ্গীকার করেছেন তা কি আচরণ বিধি ভঙ্গ নয় ?

কেননা সেদিনের অনুষ্ঠানটি সরকারি কোন কর্মসূচি ছিল না। সরকারের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং রাষ্ট্রীয় ভবন গণভবনকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্বাচনী আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে, সরকার একতরফা ও ভোটারশূন্য নির্বাচনের পথেই হাঁটছে।

রিজভী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্মাণ করতে দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রহমানসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন তা অরুচিকর, অশ্রাব্য ও উস্কানিমূলক। তফশীল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী এ ধরণের বক্তব্য দিতে পারেন না।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ ধারায় বলা আছে, কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের মনোনীত কেউ বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি উস্কানীমুলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করতে পারবেন না। ঐ ধারা উপ-ধারা (ক) তে উল্লেখ আছে, ‘নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদান বা কোন ধরণের তিক্ত (উস্কানিমুলকক বা মানহানিকর) বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন না।’

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী বর্তমানে সব ধরণের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ তবু এই উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

https://www.youtube.com/watch?v=r5eiQBTN1y8

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment