রক্তপাত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন বিচার করা হবে

পরিবারের কোনো একজন সদস্য নিহত হলে গোটা পরিবারের ওপরই নেমে আসে শোকের ছায়া। আজীবন তারা এ শোক বয়ে বেড়ায়। তা ছাড়া পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক নানাবিধ সমস্যা তাদের ওপর চেপে বসে। সর্বোপরি মাতৃ ও পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয় নিহতের সন্তান-সন্ততিরা। বিধবা হয় স্ত্রী অথবা স্বামী হয় স্ত্রীহারা। মা-বাবা হারান তাঁদের কলিজার টুকরা সন্তান।

ইসলাম অন্যায়ভাবে মানব সন্তানকে হত্যা করা কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যা করা ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই তো আল্লাহ তাআলা জালিমকে ছাড় দেন, এরপর যখন পাকড়াও করেন তখন আর তাকে ছাড় দেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৪২)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম।’ (সুরা আল-মায়িদা: ৪৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.)ও হত্যাকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবিরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি: ৬৮৭১; মুসলিম: ৮৮) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে।’ (বুখারি: ৬৩৫৭; মুসলিম: ৩১৭৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম থেকে একটি গলা বের হয়ে কথা বলতে শুরু করবে। সে বলবে, আজ আমি তিন ব্যক্তির প্রতি ন্যস্ত হয়েছি, প্রত্যেক অত্যাচারী, যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক স্থির করে এবং ওই ব্যক্তি যে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে। অতপর সে তাদের থাবা দিয়ে কব্জা করবে এবং জাহান্নামের গহীনে তাদের নিক্ষেপ করবে।’ (মুসনাদ আহমদ: ১১৩৭২, সহীহ)

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment