দোহারে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বেকারিতে তৈরী হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য,যথাযথ মনিটরিং নেই

 মাহবুবুর রহমান টিপু,দোহার(ঢাকা) প্রতিনিধিঃ

ঢাকার দোহার উপজেলার নামী-দামী বেনামে প্রায় ১৪/১৫টি গড়ে উঠেছে বেকারি ও ফাষ্ট ফুডের দোকান। এর মধ্যে অধিকাংশ বেকারি ও ফাষ্ট ফুডের বিরুদ্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে,ভেজাল ও নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে খাদ্যসামগ্রী তৈরির অভিযোগ রয়েছে।আর এসকল প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনের নেই কোন মনিটরিং ব্যবস্থা। অনুসন্ধানীতে জানা যায়,উপজেলার মেঘুলা হাট-বাজার, জয়পাড়া হাট-বাজার,জয়পাড়া চৌধুরী পাড়া বাজার,করম আলী মোড় বাজার,মুকসুদপুর বাজার, আল আমিন বাজার, বউ বাজার,সুতারপাড়া বাজার,বাহ্রঘাট বাজার ও কার্তিকপুর বাজারে ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেকারি ও ফাষ্ট ফুডের মালিকরা অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেই কোন মনিটরিং ব্যবস্থা এবং তৎপরতা। ফলে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মানহীন খাদ্যসামগ্রী তৈরী হচ্ছে। এতে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিষয়টি চরম ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে। মানহীন এসব খাবার উপজেলার অলি-গলিতে, স্কুল-কলেজের সামনে, হাট-বাজারের ফাষ্ট ফুড ও বিভিন্ন চায়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও মেয়াদ উত্তীর্ন বাসী খাদ্য-সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এসকল খাবার খেয়ে সব বয়সী মানুষ,কোমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থীরা পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

খাদ্য নীতিমালা অনুযায়ী বিএসটিআই ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন নিয়ে বেকারি চালু করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানছেন না কেউ।এছাড়াও প্যাকেটের গায়ে বাধ্যতামূলক পণ্যের উপাদান, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীনের তারিখ লেখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বেকারিগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে পণ্য উৎপাদনের কথা থাকলেও কোনো প্রতিষ্ঠানই এসবের তোয়াক্কা করছেন না। বিএসটিআই দোহার শাখায় না থাকাতে উপজেলা স্বাস্থ্য স্যানেটারী কর্মকর্তার সঠিক মনিটরিং না থাকায় এসব বেকারির উৎপন্ন খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজেদের কলাকৌশলে আটা, ময়দা, চিনি, ডালডা, সোডা, রং ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করছে ইচ্ছেমত। মেঘুলা বাজারে ভূমি অফিস সংলগ্ন বিসমিল্লাহ বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়,কারখানার উদপাদিত খাদ্যদ্রব্যের বিএসটিআই এর কোন অনুমোদন নেই। স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে অদক্ষ কারিগর দ্বারা নিম্নমানের উপকরণ মিশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে বেকারি সামগ্রী। কারখানাটির ভিতরে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।তাছাড়া পাশেই বাজারের খোলা ড্রেনের মংলা আবর্জনা ভাসতে দেখা যাচ্ছে।কারখানাটির ভিতরে কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্টসহ নানা রকমের খাবারের উপর দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। মাছিগুলো আবার কিছু খাবারের উপর জেঁকে বসছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করার কড়াইগুলো অপরিস্কার ও নোংরা। শ্রমিকরা খালি গায়ে ও হাতে এসব পণ্যের কাচামাল বানাচ্ছে এবং খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। সেই সাথে খালি গায়ে থাকার ফলে শ্রমিকদের শরীরের ঘাম এসে পড়ছে আটার উপর। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছাড়াই বাহারি রকমের আকর্ষণীয় মোড়কে বাজার জাতের জন্য প্যাকেট করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেকারির ম্যানেজার জানান, মালিক মৃত।পরে অনেক খোজাঁখুজিঁ করে মালিক আবুল ফকিরের ছেলে মো. তনময় হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তার কাছে বেকারির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। একইরকম জয়পাড়া, মুকসুদপুর ও আল আমিন বাজারের কয়েকটি বেকারিতে গিয়ে একই পরিবেশ লক্ষ করা যায়। তাদেরও নেই কোন প্রকার নিয়মনীতি ও পরিবেশ রক্ষার বালাই। যে যেভাবে পারছে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বেকারির ব্যবসা। এ যেন মগেরমুলুকে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.মো.জসিম উদ্দিন জানান,ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরন দিয়ে তৈরি করা এসব খাবার খেলে দেহের ও পেটের মারাত্মক ক্ষতি। পেটব্যাথা, শরীর দূর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আক্তার রিবা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি না মেনে খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন করছে এবং বারবার অভিযানের পরেও থামছে না। সেসকল প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন