আনন্দবাজার জায়গা দিয়েছে তসলিমাকে

”নির্বাসনের রজতজয়ন্তী, এক নির্মম পরিহাস। তিনি তসলিমা নাসরিন। বাংলা ভাষায় লেখার মাহাত্ম্য তাঁকে ভূগোল জাতপাত এবং ধর্মের রক্তচোখ থেকে বাঁচাতে পারেনি। কী করে পারবে? মেয়ে হয়ে তিনি নির্ভয়ে নিঃসঙ্কোচে মেয়েবেলা এবং গোটা মেয়েজীবনের কথা লিখবেন, পুরুষের সমাজ তা কেমন করে মেনে নেবে? কোনও মেয়ে লেখক যদি লেখেন, পুরুষ আমাকে এক লাথি মারলে আমি তাকে দশ লাথি ফিরিয়ে দেব, তা হলে তাঁকে গিলোটিনের হাত থেকে বাঁচাবে কে?

এই উগ্রতা আর অনমনীয় মনোভাব তসলিমার বিপদ বাড়িয়েই চলেছে। কোনও কিছুতেই পরোয়া করেন না তিনি। এই দীর্ঘ পঁচিশ বছরই তিনি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রশ্ন হল, এই অবস্থা থেকে তাঁকে রক্ষা করবে কে? এর আগে বাংলা ভাষায় লিখে কোনও লেখকের এমন পরিণাম হয়নি। বাংলার যে বুদ্ধিজীবী আর সুশীল বাবুদের দায় ছিল, তাঁদের তো তসলিমা নাসরিন নামটি শোনামাত্র ভাবসমাধি হয়। রাজনীতির প্রগতিবাবুদের অবস্থা আরও খারাপ। ভোটাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে তাঁকে রাতারাতি বিদায় করতে পারলে বাঁচেন।

 

কেউ নেই আপনার পাশে তসলিমা। এই রজতজয়ন্তীর মুখে দাঁড়িয়ে আপনাকে সেলাম জানিয়ে বলি, লড়াইটা শেষ পর্যন্ত আপনাকে একাকেই করতে হবে, সেই সঙ্গে খুঁজতে হবে লড়াকুদের। গ্রিসের সেই মহান দার্শনিক ডায়োজিনিসের মতো আপনিও দিনের বেলায় লণ্ঠন হাতে কলকাতার রাস্তায় নেমে আসুন। কেউ জানতে চাইলে বলুন, মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছি।

অরুণকান্তি দত্ত

বেলুড় মঠ, হাওড়া ”

ওপরের চিঠিটি আজ আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আমার লেখা, আমাকে নিয়ে কোনও ভালো লেখা, আমার বই প্রকাশ হওয়ার খবর, বইয়ের রিভিউ আনন্দবাজারে বহু বছর আগে থেকেই ছাপানো বন্ধ হয়ে গেছে। আনন্দ থেকে আমার নতুন বই প্রকাশও এক যুগেরও বেশি হলো বন্ধ । ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হয়েছে দু’বার আনন্দ পুরস্কার পাওয়া লেখককে!! কেন করা হয়েছে, আজও আমার কাছে তা এক বিরাট রহস্য।

আজ হঠাৎ আনন্দবাজারে এই লেখাটি দেখে চমকে উঠলাম। ভুল করে কি লেখাটি হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে! নাকি মালিকের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ লেখাটি চুপচাপ ছাপিয়ে দিয়েছে। ফাঁক বা ফাঁকি যা হোক, ধন্যবাদ তাকে। আর শত ধন্যবাদ অরুণকান্তি দত্তকে। অরুণকান্তি দত্ত, আপনার চিঠিটি আমাকে চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে। পাঠকের ভালোবাসা, এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর নেই। একশটা আনন্দপুরস্কারের চেয়েও বড় সেই পুরস্কার।”

নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

আপনি আরও পড়তে পারেন