২০১৯ সালের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে ছাত্র রাজনীতি

সময়ের পালাক্রমে বিদায় নিচ্ছে ২০১৯ সাল। বছর জুড়েরই নানা উত্থান পতনের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। আর এই ঘটনা প্রবাহ এ দেশের মানুষকে যেমন নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে তেমনি মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখিয়ে ডুবিয়েছে হতাশায়।

এ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাস্তব রুপ লাভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন। তবে ছাত্ররাজনীতির সবচেয়ে কলঙ্গজনক অধ্যায়েরও জন্মদিয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন সংগঠন আওয়মীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বনী দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে।

২৮ বছর পর ডাকসু : ২০১৯ সালের মার্চ মাস এই বছরের সবচেয়ে আলোচিত কিংবা ছাত্ররাজনীতিকে ৩৬০ ডিগ্রি পরিবর্তন করে বহু সংগ্রামের পরে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। যদিও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও অভিযোগ। বছরের শুরুতে ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারা অনুযায়ী ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য চিফ রিটার্নিং অফিসারকে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার জন্য পাঁচজন অধ্যাপককে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। তবে ভোটকেন্দ্র হিসেবে হলের পরিবর্তে অ্যাকাডেমিক ভবন করার দাবি উঠলেও প্রশাসন তা আমলে নেয়নি। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়াারি পর্যন্ত— চলে মনোনয়ন ফরম বিতরণ। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হলের নোটিশ বোর্ডে ভোটারতালিকা প্রকাশ করা হয় এবং ১১ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বহু আকাঙ্খিত ডাকসু নির্বাচন।

আর এ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র মুক্তি জোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট ও স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আর নির্বাচনে ডাকসুর ২৫ টি পদের ২৩টিতে ছাত্রলীগ সমর্থীত প্রার্থীরা জয়ী হলেও ভিপি পদে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়নুল হক চৌধুরী শোভনকে হারিয়ে ডাকসুর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুর।

যদিও ভোটকার চুপি, রাতে ব্যালট পেপারে ছিলসহ নানা অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র মুক্তি জোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট ও স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ যদিও পরে বিতর্কিত নির্বাচন হওয়া সত্বেও ভিপি পদে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেন নূরুল হক নুর।

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ : ২০১৮সালের ১১ ও ১২ মে ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষে ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। কথিত আছে এই কমিটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছিল। ফলে এ কমিটির প্রতি সবার প্রত্যাশা ছিল খানিকটা বেশি। কিন্তু তাদের বিতর্কিত কর্মকা- সবাইকে হতাশ করেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে উপেক্ষিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাও । একই সাথে অভিযোগ ওঠে অসম্মান করেছেন একাধিক সিনিয়র নেতাকে।

দায়িত্ব গ্রহনের প্রায় এক বছর পর ১৩ই মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহি সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রশ্ন উঠে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে । অভিযোগ ওঠে কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না দিয়ে বিতর্কিত এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হত্যা-চেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অ-ছাত্ররাও। তাছাড়া, সংগঠনের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা।

আর দায়িত্বের এক বছরে করেছেন মাত্র শাখার কমিটি যা নিয়েও ওঠে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এছাড়াও পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পূর্বেই দুর্নীতি, চাদাবাজী, স্বজনপ্রীতি, অদক্ষতা ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওমীলীগের সভানেত্রী শেখা হাসিনার অসন্তোষের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শোভন ও রাব্বানী এবং পরে ছাত্রীলগের ভাড়প্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভাড়প্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয় লেখক ভট্টাচার্যকে।

আপনি আরও পড়তে পারেন